• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একাংশ

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

কোটার প্রজ্ঞাপন নিয়ে দিনভর চাপান-উতোর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০১৮

সরকারি চাকরিতে কোটা বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করা নিয়ে শিক্ষার্থী এবং প্রশাসনের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর চাপান-উতোর চলেছে। আন্দোলনকারীরা সরকারকে অনেকটা হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্রজ্ঞাপন জারির জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। তবু আজ বুধবার বেলা ১১টায় সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। অন্যদিকে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি সরকারের চূড়ান্ত বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান। তবে কবে সেটি হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিনক্ষণ ঘোষণা জানাননি তিনি।

৭ মে’র মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা বিষয়ে একটা সুরাহার সিদ্ধান্ত হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, যখন ছাত্ররা আন্দোলন করছিল, তখন সরকারের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৭ তারিখ (৭ মে) ফাইনাল করা হবে। কিন্তু তারপরও আন্দোলন থামেনি। তাই আমার বিবেচনায় বলতে পারি, ৭ তারিখের কোনো মূল্য থাকল না। সেই তারিখ পর্যন্ত যদি তারা আন্দোলন বন্ধ রাখত, তাহলে আজ বলা যেত ৭ তারিখের মধ্যে আমরা কোনো সমাধান করতে পেরেছি কি না। কিন্তু এখন তো আর তা বলতে পারব না। তবে কোটা নিয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা যেকোনোভাবে প্রস্তুত, কমিটি লাগলে করব। সরকার প্রধান যে পদ্ধতিতে বলবেন, সেভাবে আমরা ব্যবস্থা নেব। কোটা বাতিলের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এ নিয়ে এখনো সরকারের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় সুস্পষ্ট কিছু জানাননি জনপ্রশাসন সচিব। তিনি বলেন, এত তো খোঁচানো যাবে না। আমি এখন হয়তো একটা কিছু বললাম, কাল তার একটু ব্যত্যয় ঘটলে, পরে আপনিই বলবেন, গতকাল এটা বলেছিলেন, আজ আবার অন্য কথা। এত অ্যাডভান্স কথা বলার সুযোগ নেই।

এদিকে কোটা বাতিলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ঘোষণার’ ২৭ দিন পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরুল হক নূর বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর ২৭ দিন কেটে গেলেও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। বিষয়টি ছাত্রদের ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে। অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করে ছাত্রদের মধ্যে যে শঙ্কা তা দূর করতে হবে। প্রজ্ঞাপনের জন্য ছাত্রদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবেন না। সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দু’বার ঘোষণা করেছেন, কোটা থাকবে না। কিন্তু প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। বাংলার ছাত্রসমাজের সঙ্গে নাটক করা হচ্ছে, প্রহসন করা হচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম আহ্বায়ক নূর বলেন, আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের আত্মীয়দের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ফলে বুঝতে পারছি, আমাদের ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দোলনের শুরু ’৯০ দশকের মাঝামাঝি থেকে। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা কোটার আওতায় আনা হয় তাদের সন্তানদের। পরে নাতি-নাতনিদেরকেও। ১৯৯৭ সালে জামায়াতপন্থিরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তখন ব্যর্থ হলেও নানা সময়ই এই দাবি নিয়ে মাঠে নামে তারা। তবে এবার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে কোটা আন্দোলনকারীরা কোনো বিশেষ কোটার নাম নেননি। পরিষদ এবার সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে। আর গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে পরিষদের নেতাদের বৈঠকের পর আন্দোলন ৭ মে পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তখন কাদের জানান, এর মধ্যে কোটা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে। অবশ্য পরে আন্দোলনকারীরাই এই সমঝোতা ভেঙে পরদিন আবার আন্দোলনে নামেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি সরকারি চাকরিতে অনীহা থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নামেন। আবার এই আন্দোলনে বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী জড়িয়ে পড়ে বলে তথ্য ছিল সরকারের কাছে। এরকম পরিস্থিতিতে গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে ঘোষণা দেন, কোনো কোটার দরকার নেই। এরপর ছাত্ররা ক্লাসে ফিরলেও তাদের মধ্যে এ নিয়ে অস্থিরতা রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরে করা সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কোটা নিয়ে তিনি যা বলেছেন সেটা আর পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই। তাই ছাত্ররা চাইছে দ্রুত প্রজ্ঞাপন। এর মধ্যে ৭ মে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম জানান, কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন কবে হবে, সেটি তিনি জানেন না। আর গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রদের পক্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়। আজ বুধবার পালিত হবে এই কর্মসূচি।

বর্তমানে সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ পদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads