• শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪২৯

হাত হারানোর পর না ফেরার দেশে চলে যাওয়া কলেজছাত্র রাজীব হোসেন

সংরক্ষিত ছবি

বাংলাদেশ

রাজীবের পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ মে ২০১৮

দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে হাত হারানোর পর না ফেরার দেশে চলে যাওয়া কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ক্ষতিপূরণের এই টাকার অর্ধেক পঞ্চাশ লাখ টাকা আগামী এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি) ও বেসরকারি পরিবহন প্রতিষ্ঠান স্বজন পরিবহনের মালিককে। এর মধ্যে দুটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে। মঙ্গলবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশের সময় রাজীব হোসেনের ছোট দুই ভাই মেহেদি হাসান ও আবদুল্লাহ এবং তাদের খালা জাহানারা পারভীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাজীবের খালা জাহানারা পারভীন এবং গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা ওমর ফারুকের নামে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় একটি যৌথ ব্যাংক হিসাব খোলা হবে। এই ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ জমা দিতে হবে আগামী এক মাসের মধ্যে। ২৫ জুন এ সংক্রান্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে জমা দিতে হবে এবং ওইদিন পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

আদালতে রিটকারী আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, বিআরটিসির পক্ষে ব্যারিস্টার মো. মুনিরুজ্জামান ও সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল জানান, ‘আদালতের এই আদেশ একটি মাইলফলক। অসহায় একটি পরিবারের সদস্যরা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়েছে। এখন আদালতের হস্তক্ষেপে তারা কিছুটা হলেও প্রতিকার পাবে।’

তিনি বলেন, ‘২৫ জুন বিষয়টি আবার আদালতে এলে তখনই বাকি ৫০ লাখ টাকার বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন আদালত।’

এদিকে বিআরটিসির আইনজীবী মো. মুনিরুজ্জামান বলেছেন, কোনো ধরনের মূল্যায়ন না করেই ক্ষতিপূরণের আদেশটি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিআরটিসি বাসের অবহেলাজনিত কোনো দায় ছিল কি না সেটা মূল্যায়ন করা জরুরি ছিল। বিআরটিসি যেকোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত যদি সেটা সঠিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়।’

৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিআরটিসি বাসের যাত্রী কলেজছাত্র রাজীবের হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎই পেছন থেকে স্বজন পরিবহনের একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার সময় দুই বাসের ঘষা লাগে। এ সময় দুই বাসের চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান।

পরদিন দুই বাসের চাপায় ঝুলতে থাকা রাজীবের হাতের ছবি সংবাদমাধ্যমে এলে ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে একটি রিট আবেদন করেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল। তখন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ আহত রাজীবের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

এর মধ্যে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে মারা যান রাজীব। এর প্রেক্ষিতে তার মৃত্যুর খবর অবহিত করে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আদেশের জন্য আবেদন করেন রিটকারী আইনজীবী।

জানা গেছে, রাজধানীর তিতুমীর কলেজের স্নাতকের ছাত্র রাজীব হোসেনের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads