• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
পরিবারেও জায়গা হচ্ছে না সৌদি ফেরত নারীদের

সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা অনেকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করছেন

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ

পরিবারেও জায়গা হচ্ছে না সৌদি ফেরত নারীদের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৫ জুন ২০১৮

বিভিন্ন দেশে প্রায় তিন দশকে বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক গিয়েছে সাত লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। সরকারি হিসেবে, এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি নারী শ্রমিক গেছে সৌদি আরবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে নির্যাতের শিকার অনেক নারী ফিরে এসেছেন। তবে পরিবারেও তাদের জায়গা মিলছে না বলেও খবর পাওয়া গেছে।   

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছে কয়েকশো নারী শ্রমিক। ফেরত আসা নারী শ্রমিকেরা সৌদিতে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নানা ধরনের নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। 

'একটা সৌদি টাকা চোখে দেখি নাই' 

গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে নভেম্বর মাসে সৌদি আরব গিয়েছিলেন বরিশালের আকলিমা বেগম। একহাজার রিয়াল বেতন দেয়ার কথা থাকলেও ফিরেছেন শুন্য হাতে। সেই সঙ্গে সহ্য করতে হয়েছে নানা রকম নির্যাতন ।

আকলিমা বেগম বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম নভেম্বর মাসে। ঠিক মতো খাবার দিত না। মারধর করতো। বেতন চাইলেই মারধর করতে শুরু করতো। পিঠে গরম খুন্তির ছ্যাঁক দিয়েছে, অনেক নির্যাতন করেছে। তারপর আমি পালিয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নেই। এরপর আমাকে সফর জেলে পাঠায়। একটা সৌদি টাকা দুই চোখে দেখি নাই।’

স্বামী ও শিশু সন্তানকে রেখে গিয়েছিলেন পরিবারে শান্তির জন্য। এখন ফিরে আসার পর সেখানেও ঠাঁই হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবে নির্যাতনের পর ফিরে আসা নারীর স্বামী কি করতে পারে, আপনি তো বোঝেন।’

তার ওপর কোনো যৌন হামলা বা নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সৌদিতে যে নির্যাতন হয় তার বিষয়ে আপনারা সাংবাদিকরা আরো ভালো জানেন, প্লিজ একটা ব্যবস্থা নেন।’

এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে আরো অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সৌদি আরবে দূতাবাসের সেফ হোমে। যাকে তারা বলছেন ‘সফর-জেল’।

এরকম ১২০ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা হয় ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির পক্ষ থেকে।

এর মধ্যে এ নিয়ে মোট ৯০ জন নারীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

ব্র্যাকের এই অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকে তাদের সাথে অনেকে যোগাযোগ করেন এই সব নারীদের ফিরিয়ে আনার জন্য।

এরপর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েলফেয়ার বোর্ডের মাধ্যমে এই নারীদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কয়েক দফায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে এসেছেন আরো কয়েকশো নারী শ্রমিক। তাদের অভিযোগ দিনরাত কাজ করানো হতো, সেইসাথে চলতো শারীরিক ও যৌন নির্যাতন।

চুক্তির নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলেও অনেকের পাসপোর্ট অনেকদিন ধরে আটকে রেখেছে সৌদি নিয়োগদাতারা। এরকম অনেক নারী সম্প্রতি সৌদি আরব, জর্ডান থেকে ফিরে এসেছেন। তেমনই একজন তানিয়া।

রোববার ফিরে আসা ত্রিশ জনের একজন এই তানিয়া। দুই মাসও পেরোয়নি তার আগেই ফিরে আসতে বাধ্য হন শরীরে ক্ষত আর ভাঙা পা নিয়ে। খুব বেশি কথা বলতে রাজি হলেন না তিনি। এই নারী এবং তার স্বামীর প্রশ্ন- ‘এসব বলে কি হবে?’

নারী শ্রমিকদের রক্ষার বিষয়ে সরকার কতটা তৎপর?
১৯৯১ সাল থেকে এপর্যন্ত প্রায় তিন দশকে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকরা গেছেন তার মধ্যে শুধুমাত্র সৌদি আরবেই গেছে ২ লাখ ৩৪ হাজার আটশোর বেশি নারী।

ফিলিপাইন, শ্রীলংকাসহ কিছু দেশ যখন তাদের নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে, সেসময় বাংলাদেশ নারীদের সৌদি আরবের পাঠানোর চুক্তি করে ।

কিন্তু অভিবাসন নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এক্ষেত্রে সরকারের কঠোর অবস্থান নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশী অভিবাসী মহিলা শ্রমিকদের সংগঠন বমসার পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলছেন, ছয়/সাত মাসে মাসে চার থেকে সাড়ে চার হাজার নারী শ্রমিক ফিরে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিক যতটা ফিরে আসছে তারচেয়ে বড় মুশকিল হল তার নির্যাতনের পরিমাণটা অনেক মাত্রায় বেশি। শারীরিক, মানসিক যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads