• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
‘ব্যর্থ’ প্রকল্প থেকে সরছে না

রাজধানীর ফুটপাথে স্থাপন করা ঝুলন্ত ওয়েস্টবিনের অস্তিত্ব নেই এখন আর

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

‘ব্যর্থ’ প্রকল্প থেকে সরছে না

অর্ধেক ওয়েস্টবিনই অক্ষত দাবি  ডিএসসিসি

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ২০ জুন ২০১৮

বাস্তবে দেখা না গেলেও অর্ধেকেরও বেশি ওয়েস্টবিন বা মিনি ডাস্টবিন অক্ষত রয়েছে বলে দাবি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে লাপাত্তা হওয়া মিনি ডাস্টবিনগুলোকে মেরামত করে তা পুনরায় স্থাপনের কাজ হাতে নিয়েছে ডিএসসিসি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এই ওয়েস্টবিন প্রকল্প কার্যত ব্যর্থ হলেও তা থেকে আপাতত সরছে না দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

সম্প্রতি দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসানো ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্টবিনের অবস্থা (ব্যবহারের উপযোগিতা) জানতে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। মোট ওয়েস্টবিনের ৫১ শতাংশ বা ২ হাজার ৯০৭টি অক্ষত রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। আর চুরি এবং সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে হদিস নেই ১ হাজার ২৫৪টি ওয়েস্টবিনের। প্রতিবেদন অনুসারে ১ হাজার ৫৩৯টি ওয়েস্টবিন তুলে নিজেদের কাছে রেখেছে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। রাস্তা ও ফুটপাথ সংস্কার এবং বিভিন্নভাবে অল্পমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ওয়েস্টবিনগুলো তুলে নিয়ে সংরক্ষণ করেছে তারা।

ডিএসসিসির ৫৭ ওয়ার্ডে স্থাপন করা এসব ওয়েস্টবিন সম্পর্কে তথ্য চেয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এক অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ডিএসসিসির সচিব মো. শাহবুদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে উল্লিখিত তারিখের পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে ওয়েস্টবিনগুলোর তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ওয়ার্ড পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শককে। ওয়ার্ডভিত্তিক তথ্যগুলো স্ব-স্ব আঞ্চলিক কর্মকর্তার দফতরের মাধ্যমে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাঠাতে বলা হয়।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সালে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসানো হয় ৫ হাজার ৭০০ মিনি ডাস্টবিন (ওয়েস্টবিন)। শুরুতে এসব ডাস্টবিন ব্যবহারে নগরবাসীর মধ্যে আগ্রহ থাকলেও বিনগুলো থেকে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো ব্যবহারে উৎসাহ হারাতে থাকে তারা। কিছুদিনের মধ্যেই চুরি হতে থাকে বিনগুলোর উপরের ঢাকনা। বছর যেতে না যেতেই অধিকাংশ ওয়েস্টবিনের ধারক (স্ট্যান্ড) ছাড়া কিছুই চোখে পড়েনি নগরবাসীর।

ডিএসসিসির প্রতিবেদনে ৫১ শতাংশ ওয়েস্টবিন অক্ষত বলা হলেও বাস্তবে তার মিল পাওয়া যায়নি। বেশ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে ডিএসসিসির বসানো ওয়েস্টবিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়ক অর্থাৎ সিটি কলেজ থেকে বিজিবি সদর দফতর পর্যন্ত সড়কের দুইপাশে একটিও অক্ষত ওয়েস্টবিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো সড়কের দুইপাশে মাত্র চারটি ওয়েস্টবিনের পাত্র ছাড়া শুধু স্ট্যান্ড পাওয়া যায়। একই চিত্র সায়েন্সল্যাব বাস স্টপেজ থেকে শাহবাগ এবং শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন এলাকা পর্যন্ত। পুরো সড়কের দুইপাশে যে কয়েকটি ওয়েস্টবিন দেখা গেছে তার কোনোটাই ব্যবহারের উপযোগী অবস্থায় নেই।

ডিএসসিসির ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম সজীব বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমার ওয়ার্ডে এক শ মিনি ডাস্টবিন বসানো হয়েছিল। সত্য কথা বলতে কি, এর একটাও ব্যবহারের উপযোগী নেই। এগুলো বসানোর পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তদারিক না থাকায় সবই চুরি হয়ে গেছে, না হয় ভেঙে পড়ে আছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় বসানো ওয়েস্টবিনগুলোরও একই অবস্থা বলে জানান কাউন্সিলর মো. সুলতান মিয়া।

ডিএসসিসির সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খোন্দকার মিল্লাদুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ডিএসসিসি এলাকার সড়কগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ওয়ার্ডপ্রতি এক শ করে ওয়েস্টবিন বসানো হয়। টুকরা কাগজ, খাবারের মোড়ক, পানির বোতল ও ক্যানের মতো শুকনা ও কঠিন বর্জগুলো ফেলতে এই ওয়েস্টবিনগুলো বসানো হয়। এগুলো ব্যবহারে নগরবাসীর মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং, পোস্টারিংসহ বেশ কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু মানুষকে খুব সহজেই সচেতন করা সম্ভব নয়। তাই কার্যত ওয়েস্টবিন প্রকল্পটি ব্যর্থ মনে হতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষ তো সেগুলো ব্যবহার করেছে। এগুলো ব্যবহারে মানুষের সচেতনতা বাড়বে ছাড়া কমবে না।

তিনি বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় ৫ হাজার ৭০০ ওয়েস্টবিন বসানো হয়। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ওয়েস্টবিন চুরি হয়ে গেছে। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে কিছু। সম্প্রতি আমরা পরিদর্শন করে ৫১ শতাংশ ওয়েস্টবিন অক্ষত পেয়েছি। কিছু ওয়েস্টবিন আমাদের কাছে আছে যেগুলো রাস্তা-ফুটপাথ সংস্কারের সময় তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিছু ওয়েস্টবিন অল্প মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে, এগুলোকে সংস্কার করে পুনরায় বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মিল্লাদুল ইসলাম বলেন, ব্যর্থ হয়েছে এমন কারণ দেখিয়ে বড় একটা প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। টুকিটাকি কাজ ছাড়া নতুন করে এই প্রকল্পে বড় অঙ্কের কোনো অর্থব্যয়ও হচ্ছে না। আনুমানিক ১ হাজার ২০০ ওয়েস্টবিন আমাদের কাছে আছে, যেগুলো সামান্য মেরামত করলেই ব্যবহারের উপযোগী হবে। আশা করি নগরবাসীর মধ্যে ধীরে ধীরে ওয়েস্টবিন ব্যবহারের সচেতনতা বাড়বে। একটা সময় এই প্রকল্প ব্যর্থ বলে কারো মনে হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads