• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
বদলীর পরও সরকারী বাসা ছাড়ছেন না এসআই

মাধবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম

ছবি : বংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

বদলীর পরও সরকারী বাসা ছাড়ছেন না এসআই

  • হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৮

হবিগঞ্জের মাধবপুর থানায় প্রায় ১৬ বছর ধরে কর্মরত থাকা মাধবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম অবশেষে বদলী হয়েছেন গত এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে । কিন্তু বদলীর এতদিন পরও সরকারী বাসা ছাড়ছেন না তিনি। বর্তমানে সিলেটের ওসমানী নগরে কর্মরত থাকলেও নিয়মিতই মাধবপুর থানায় আসা-যাওয়া করছেন তিনি।

গত ২৮ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘একই থানায় ১৬ বছর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আর ওই সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। আর তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় জেলা পুলিশসহ রেঞ্জ অফিসে। পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের নজরে আসে বিষয়টি।

পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তিনি মাধবপুর থানা থেকে সিসি গ্রহণ করেন। মাধবপুর থানার সিসি নং- ৯০৩, ১৪টা ৩০ মিনিট বলে পুলিশের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করে। তবে তার সিসিতে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ৩০/০৪/২০১৮ ইং।

বদলীর পরও বাসা না ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে মাধবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘তার থাকার বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারবো না আপনি আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন তিনি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন’।

এ ব্যাপারে জানতে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে মমিনুল ইসলাম (বিপি নং-৭৮৯৭০৯৬২৭২) পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দিয়ে ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাধবপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। প্রথমে ড্রাইভার ও পরে জুনিয়র সেরেস্তায় (মুন্সি) হয়ে কাজ করেন মমিনুল। এরপর এএসআই পদে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় বদলি হন। ২০০৯ সালে পুনরায় মাধবপুর থানায় ফিরে আসেন। ২০১২ সালে এপিবিএন এর কোটায় এসআই পদে পদোন্নতি লাভ করায় চলে যান এপিবিএনে। এরপর নামমাত্র কয়েকদিন এপিবিএনে চাকরি করে ২০১২ সালেই আবার চলে আসেন মাধবপুর থানায়। গত জানুয়ারিতে সুনামগঞ্জ জেলায় বদলির আদেশ হলেও তিনি সেখানে যোগদান করেননি। পুলিশের আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসআই মমিনুল ইসলাম মাধবপুরে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১০ থেকে ১২ বার বদলির আদেশ হলেও রহস্যজনক কারণে তা আবার বাতিল বা স্থগিত করে রাখা হতো।

এসআই মমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগঃ

এসআই কনফারেমশেনর পূর্বে পিএসআই হিসেবে ৬ মাস থানায়, সার্কেল অফিস, রিজার্ভ অফিস, কোর্টসহ বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিধান থাকেলও তা না করে মাধবপুর থানায় অবস্থান করে মামলা তদন্ত করতেন তিনি।

এসআই কনফার্ম ট্রেনিং বা ডিপার্টমেন্টাল ক্যাডেট (ডিসি কোর্স) নিতে টাঙ্গাইল পিটিস মহেরাতে টানা ৬ মাস থাকার কথা থাকেলও তিনি প্রতি সাপ্তাহে অবস্থান করতেন মাধবপুরে। তার কতৃত্ব পুরো মাধবপুরে রাখার জন্য তিনি থাকেতন বেপরোয়া।

সে সময়ে থানার সরকারী বাসায় অবস্থান, ওসির সাথে সরকারি গাড়ী ব্যবহার এমনকি ভিআইপি রিসিপশনসহ সবত্রই উপস্থিতি থাকতো রীতিমতো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে দেখা যেত তাকে। তার এ বিচরণ নিয়ে তখন উপেজলাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। সে সময়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন এলাকার নিরীহ লোককে চার-ডাকাত বানিয়ে মামলায় জড়ানোর। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলাকাবাসীর সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি , পুলিশের অভিযানের নামে শিবজয়নগর গ্রামের নিরীহ লোককে গুলি করে আহত করা, গ্রামবাসির মধ্যে আতংক সৃষ্টি করা, উপজেলার কাউরা ও কালিকাপুর গ্রামবাসীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামটি পুলিশ ভয়ে পুরুষ শুন্য হলে তার নেতৃত্বে মহিলাদের ঘরে তল্লাশী চালিয়ে অপীতিকর ঘটনা ঘটানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এছাড়াও ছিনতাইকারীদের সাহায্যকারী, ভারত থেকে অবৈধ মালামাল আনার পিছনে মমিনুল ইসলামের হাত থাকার অভিযোগও উঠে একাধিক বার। মমিনুল ইসলামের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদে তাকে মাধবপুর থানা থেকে প্রতাহারের দাবীতে স্থানীয় বিভিন্ন স্থরের নতৃবৃন্ধ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবেরাধ করে প্রতিবাদ সভা ও মানববনও করে। মানববন্ধনে ও প্রতিবাদ সভায় মমিনুল ইসলমের বিরুদ্ধে উপরোল্লিখিত অভিযোগ তুলা হয়েছিল।

মমিনুল ইসলাম নিজেকে সবেক এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার জামাই পিরচয় দিয়ে দাপুটে বেড়িয়েছে সব। যদিও তার ওই পরিচয়ের কোন সত্যতা মিলেনি। তবে তার চাকুরী জীবনের সবটুকু সময় মাধবপুরে থাকার রহস্য নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সর্বমহলে। সম্প্রতি গত ৩০ এপ্রিল এসআই (উপ-পরিদর্শক) মমিনুল ইসলামের বদলীর আদেশ হওয়ায় মাধবপুর থানার পুলিশ সদসসহ জনমনে বিরাজ করছে স্বস্থির নিশ্বাস। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাসসহ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। অনেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বর্তমান পুলিশ প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads