• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ফাদার রিগনকে সমাহিত করা হবে মোংলায়

ফাদার রিগন

ছবি : ইন্টারনেট

বাংলাদেশ

মরদেহ আসছে রোববার

ফাদার রিগনকে সমাহিত করা হবে মোংলায়

  • বাগেরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ অক্টোবর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ইতালির নাগরিক ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ আগামী রোববার সকালে দেশে আনা হচ্ছে। এই বিদেশি বন্ধু ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। তার অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর এক বছর পর সরকারিভাবে মরদেহ ইতালি থেকে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। মোংলার শেলাবুনিয়ার সেন্ট পলস গির্জার সামনে ফাদার রিগনকে সমাহিত করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ-২-এর সিনিয়র সহকারী সচিব সুডানা ইকরাম চৌধুরী জানান, রোববার ভোর ৫টায় টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় হেলিকপ্টারে করে ফাদার রিগনের মরদেহ বাগেরহাটের মোংলায় পাঠানো হবে।

সুডানা ইকরামের দেওয়া তথ্য মতে, ফাদার রিগনকে বহন করা হেলিকপ্টার মোংলার শেখ রাসেল স্টেডিয়ামে অবতরণের পর সকাল সাড়ে ৯টায় মরদেহ আনা হবে মোংলা উপজেলা পরিষদের মাঠে। সেখানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রিগনকে সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই ঘণ্টা উপজেলা পরিষদের মাঠে রাখার পর মরদেহ নেওয়া হবে ফাদার রিগনের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় এবং সেন্ট পলস হাসপাতালে। সবশেষে শেলাবুনিয়ার সেন্ট পলস গির্জার সামনে তাকে গার্ড অব অনার দিয়ে সেখাইে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হবে।

ইতালির নাগরিক ফাদার রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সে দেশের ভিচেঞ্চায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২৮ বছর বয়সে খ্রিস্টধর্ম প্রচারে ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা দেওয়ার পাশাপশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি মোংলার শেলাবুনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৯ সালে রিগনকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ পদকসহ বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার।

ফাদার রিগন মোংলায় থাকা অবস্থায় হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেললে ২০১৪ সালে তার ভাই এসে তাকে ইতালিতে নিয়ে যান। ইতালিতে মৃত্যু হলে তার লাশ বাগেরহাটের মোংলার সেন্ট পলস গির্জার পাশে সমাহিত করতে হবে এই শর্তে তিনি ভাইয়ের সঙ্গে যান। গত বছরের ২০ অক্টোবর ইতালির ভিচেঞ্চায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার রিগন।

দীর্ঘ সময় মোংলায় অবস্থানকালে ফাদার মারিনো রিগন ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের ৩৫০টি গান, জসীম উদ্দীনের নকশীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এদেশের খ্যাতিমান কবিদের অসংখ্য কবিতা। অন্যদিকে ফাদার রিগন বাগেরহাট জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট পলস হাসপাতালসহ প্রতিষ্ঠা করেন ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্ট পলস সেলাই কেন্দ্র, যেখান থেকে বিদেশে রফতানি করা হতো নকশীকাঁথা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads