• রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪২৯
পিরোজপুরের ৭ আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ

পিরোজপুরের ৭ আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ

  • বাসস
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার সাত আসামির বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামীরা হলেন- পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওরফে আব্দুল মান্নান ডিলার ওরফে মান্নান (৭৫), আজাহার আলী হাওলাদার ওরফে আজু মুন্সী (৮৮), আশ্রাব আলী ওরফে আশরাফ আলী হাওলাদার (৬৭) এবং মো. মহারাজ হাওলাদার ওরফে হাত কাটা মহারাজ (৬৮)।

এছাড়াও একই এলাকার মো. ফজলুল হক হাওলাদার (৭৫) কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় গত ৩০ অক্টোবর মারা যান। তবে এ মামলার আরও ২ আসামি এখনও পলাতক থাকায় তাদের নাম প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক এম এ হান্নান খান।

এম এ হান্নান খান বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া থানার ৭ আসামির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা মো. বদরুল আলম এ তদন্ত শুরু করেন।  এরপর ৬ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত শেষ হয়।

তদন্ত শেষে এ মামলায় ৩৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার মোট ৪টি অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগগুলো হল- প্রথম অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ৪ জুন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার ৩নং ধাওয়া ইউনিয়নের পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীদের সঙ্গে নিয়ে আসামীরা হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র মুকুন্দু বিহারী মল্লিক ওরফে ধূলাইড্যা, চিত্ত রঞ্জন বেপারী, সতিশ চন্দ্র বেপারী, শরৎ চন্দ্র মাঝি, রসিক ঘরামী, উপেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি এবং অনন্ত চাষীকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ পূর্বক গুলি করে হত্যা করে এবং আনুমানিক ৪০/৪৫ টি বাড়ির মালামাল লুন্ঠন করে অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়।

দ্বিতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১৬ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার লক্ষ্যে চরখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে অমূল্য রতন হাওলাদারের বাড়ি হতে স্বর্ণ, গহনা ও মূল্যবান মালামাল লুট করে। একইসঙ্গে রতন হাওলাদারকে আটক করে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও সুরেন হাওলাদারের বাড়িতে লুটপাট ও তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

তৃতীয় অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের চরখালী গ্রামে মনোরঞ্জন মিস্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে ও তার বড় ভাই চন্দ্র কান্ত মিস্ত্রীকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও অপহরণ পূর্বক হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার সময় ২০০টাকার বিনিময়ে আসামীদের কাছ থেকে মুক্তি পান।

চতুর্থ অভিযোগ- ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর সশস্ত্র রাজাকার সহ পিরোজপুর জেলা সদরের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে তৎকালীন স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে স্থানীয় হিন্দুদের ধ্বংস করার লক্ষ্যে হিন্দু প্রধান এলাকা ভান্ডারিয়া থানার মিয়ালকাঠী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ধারাবাহিকভাবে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সত্যরঞ্জন হালদার সহ ১৭জনকে অবৈধভাবে আটক, অপহরণ ও গুলি করে হত্যা করে। এর মধ্যে গুনমনি মিস্ত্রি নামে একজনকে বাড়ি পোড়ার জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। আসামীদের গুলিতে ৩জন ব্যাক্তি শরীরে এবং ১ জন মহিলা স্তনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরে এর মধ্যে দুইজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এসময় আসামীরা ঘটনার সময় শতাধিক বাড়ির মালামাল লুন্ঠন করে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংস করে।

এসব আসামীদের প্রত্যেকেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কনভেনশন মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে তারা জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads