• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯
কক্সবাজার হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার

কক্সবাজার হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার

ছবি ; বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

কক্সবাজার হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৮

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে হচ্ছে দেশের প্রথম মডেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার, সঙ্গে থাকছে সংক্রমণ রোধে আধুনিক সব ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে কাজের বেশিরভাগ অগ্রগতি হয়েছে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে এটা দৃশ্যমান হবে বলে জানান জেলা সদর হাসপাতালের কর্মকর্তারা। এমএসএফের সহযোগিতায় প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার হাসপাতালে এই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার নির্মাণ করা হলে জেলায় সম্পূর্ণ বিদেশের আদলে উন্নত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি দুর্গন্ধমুক্ত একটি সুন্দর পরিবেশ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এমএসএফের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর জুলিয়েন ডেবোস জানান, হাসপাতালের আগের পরিবেশ ছিল মারাত্মক সংক্রমণযুক্ত। তাদের সব ধরনের বর্জ্য পেছনে বা যেকোনো জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হতো, সেখানে গরু-ছাগল গিয়ে একটি নোংরা পরিবেশের জন্ম দিত যা মাটি, পানি, বায়ু সব কিছুকে সংক্রমিত করত। এতে হাসপাতালের নার্সসহ পরিচ্ছন্নতা কর্মী, রোগী এবং রোগীর স্বজনরাও নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। সেই পরিস্থিতিতে এমএসএফ মনে করেছে হাসপাতালকে সব দিক থেকে চিকিৎসাবান্ধব করতে হবে। সে জন্য আমরা এ প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট— যেখানে ধারালো বর্জ্য, জৈব বর্জ্য এবং সাধারণ বর্জ্যকে পৃথক করে শোধনাগারে নেওয়া হবে। বেশিরভাগ বর্জ্য ওই দহনযন্ত্রের মাধ্যমে পুড়িয়ে ফেলে ছাই করে ফেলা হবে। সেই ছাই স্থানীয় ফসলি জমিতে দিলে ফসল ভালো হবে এবং জমিও উর্বর হবে। আর তিনটি আলাদা সেপটিক ট্যাঙ্ক আছে যেগুলো কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবহার করা যাবে।

জুলিয়েন ডেবোস আরো বলেন, মডেল আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার ছাড়াও হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার, জরুরি বিভাগ, ডেলিভারি রুমের জন্য একটি লন্ড্রি স্থাপন করা হবে, একই সঙ্গে হাসপাতালের ভেতরে প্রয়োজনীয় সব স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া বর্তমানে আমাদের দুজন হেলথ প্রোভাইডার প্রতিদিন হাসপাতালে আগত রোগী এবং রোগীর স্বজনদের সংক্রমণ রোধে করণীয় এবং এর ব্যবহার বিষয়ে ধারণা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে চলমান প্রকল্প চালু হলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল হবে একটি আদর্শ হাসপাতাল। আগামী বছরের শুরুর দিকে কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে আগের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে বর্জ্য পড়ে থাকে না। বরং এখন বেশিরভাগ বর্জ্য কালো পলিথিনে মুড়িয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হচ্ছে, যাতে পৌরসভার গাড়ি খুব সহজে নিরাপদে বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে। আর হাসপাতাল এলাকা থেকে দুর্গন্ধও কমে গেছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পুচনু বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তার জন্য ইতোমধ্যে অনেক দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করে। আমরা মনে করেছি রোহিঙ্গা নাগরিকদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও যাতে উন্নতমানের সেবা পায় সে জন্য কিছু করা দরকার। এরই ধারাবাহিকতায় এমএসএফ বেলজিয়ামের সহযোগিতায় একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের একটি রায় ছিল দেশের সব হাসপাতালের বর্জ্য তাদের নিজেদেরই ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সেই আলোকে আমরা গড়ে তুলছি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং দেশের প্রথম একটি মডেল মেডিসিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাগার। মোট কথা হাসপাতালের কোনো বর্জ্য আর বাইরে যাবে না। সব কিছুই এখানে সংরক্ষণ এবং পুড়িয়ে ছাই করে ফেলা হবে। ফলে বর্তমানে বর্জ্য নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে বাইরে যে চিত্র সেটা পরিবর্তন হয়ে একেবারে উন্নত দেশের মতো দেখা যাবে। এতে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ একটি উন্নত চিকিৎসার পরিবেশ পাবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads