• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রবিউল ক্লোজড

ওসি রবিউল ইসলাম

প্রতিনিধির পাঠানো খবর

বাংলাদেশ

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রবিউল ক্লোজড

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর ২০১৯

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মো. রবিউল ইসলামকে ক্লোজড করে ঢাকা ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়ে সংযুক্ত হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার সন্ধ্যায় ডিআইজি কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত ওসি এ সংক্রান্ত কোন আদেশ হাতে পাননি বলে জানান।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগদান করেন ওসি রবিউল ইসলাম। এরমাত্র ১১ দিন পর শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় বহুল আলোচিত দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনের পর তিনি দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর চাঁদাবাজী, জুয়া খেলা, মাদক ব্যবসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। বন্ধ দেন ৬০ সদস্য বিশিষ্ট কথিত পাহাড়াদার বাহিনীর টিকিটের নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজী। নিরাপত্তার জন্য পল্লীর প্রধান প্রবেশ পথে পুলিশী পাহাড়া বসিয়ে অন্যান্য প্রবেশ পথগুলো বন্ধ করে দেন। এতে যৌনপল্লীতে লোকজনের আসা-যাওয়া কমে গেলে যৌনকর্র্মীরাসহ অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

এ ছাড়া দৌলতদিয়া যৌনপল্লির রেহেনা বাড়িওয়ালী ও স্বামী মাজেদ ম-লের বাড়ি থেকে ওসি রবিউল ইসলাম চারজন কিশোরীকে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্য থেকে মালা খাতুন নামের একজন রেহেনা ও মাজেদ ম-লসহ পল্লীর প্রভাবশালী বাড়ীওয়ালাদের আসামী করে ২০ অক্টোবর মানবপাচার আইনে মামলা করেন। এতে করে ওই চক্রটিও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওসি এ মামলায় আসামী রেহেনা ও মাজেদ ম-লের কাছ থেকে দুই লক্ষাধিক টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন।

এ দিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগদানের পর থেকে তিনি গ্রেপ্তার বাণিজ্য ছাড়াও মানুষের সাথে খারাপ আচরণ, বিনা কারণে আটকের পর হকিষ্টিক দিয়ে মারপিট করা, মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের নানা অভিযোগের বিষয়ে ডিআইজি কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়।

এর আগে গত ৫ নভেম্বর রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে ওসির বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবীর অভিযোগ করেন গোয়ালন্দের ব্যবসায়ী সৈয়দ মো. শাহজাহান হোসেন ওরফে সুমন। তিনি “মন এগ্রো ফুড এন্ড বেভারিজ লিঃ” নামক নির্মানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর এ অভিযোগটি ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয়ও তদন্ত করছে।

গোয়ালন্দ পৌরসভার প্যানেল মেয়র কোমল কুমার সাহা বলেন, আমার ছোট ছেলে আবির কুমার সাহা প্রপার হাইস্কুলের দশম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। সম্প্রতি সকালে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষ করে ফেরার পথে পথিমধ্যে ওসি রবিউল ইসলাম থ্রী-কোয়াটার প্যান্ট পড়ে থাকার অযুহাতে তাঁর (ওসি) হাতে থাকা হকিষ্টিক দিয়ে মারপিট করে।

গোয়ালন্দ বাজারের দই ব্যবসায়ী সুবল ঘোষ অভিযোগ করেন, পূজার সময় পদ্মার মোড় রাস্তার এক পাশে মোটরসাইকেলটি রাখার অপরাধে হকিষ্টিক দিয়ে পিটিয়ে লুকিং গ্লাসহসহ যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে ফেলেন। কারণ জানতে চাইলে ওসি গাড়ি আটক করে থানায় নেয়। পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলরসহ ব্যবসায়ীরা গাড়ি ছাড়াতে গেলে তাদের সাথেও ওসি দুর্ব্যবহার করেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এখানকার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে ওই চক্রটি উঠে পড়ে লেগেছে। তবে আমার কঠোর অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল বলে তিনি দাবী করেন। ব্যবসায়ী শাহজাহান সুমনের বিষয়ে তিনি বলেন, তার স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক ও নির্যাতন মামলায় ওয়ারেন্ট থাকায় থানা পুলিশ তাকে আটক করে। তার স্ত্রী তার সাথে থাকবে না বলে থানাতে ৫ লাখ টাকায় মিমাংসা করে ছাড়াছাড়ি হতে চায়। এই বিষয়টাকে শাহজাহান আমার বিরদ্ধে চাঁদা দাবীর অভিযোগ করেছেন শুনেছি ক্লোজ করা হয়েছে। কমিশনারের ছেলের মধ্যে ছাত্রত্বের কোন নমুনা ছিল না। সে স্কুল গেটে মেয়েদের সাথে বখাটেপনা করছিল।

ক্লোজড হওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি। তবে এখনো পর্যন্ত হাতে কাগজপত্র পাইনি।

এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ওসি রবিউল ইসলামকে ডিআইজি রেঞ্চ কার্যালয়ে ক্লোজড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ কার্যালয় তদন্ত করছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়েবী দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads