• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

বাংলাদেশ

বাড়ছে দুঃসাহসিক চুরি-ডাকাতি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০২১

সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছুটি। আর এ সুযোগে গত ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডার আইএফআইসি ব্যাংকের পেছনের দেওয়াল ভেঙে ব্যাংকে ঢুকে একদল ডাকাত। এক পর্যায়ে তারা টাকা রক্ষিত ভল্ট ভাঙার চেষ্টা চালায়। এসময় ব্যাংকের অটোমেটিক সিস্টেমে রেড অ্যালার্ম বেজে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ফোন দেন ৯৯৯-এ। পরে বাড্ডা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসলে ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্য পালিয়ে গেলেও ব্যাংকের ভেতর থেকে একজনকে আটক করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পুলিশের একটি বিশেষ দল। আটক হয় আরো দুজন।

দুঃসাহসিক এ ডাকাতির ঘটনার আগে গত ৯ নভেম্বর রাতে গুলশানের ব্র্যাক আইটি সার্ভিসেস লিমিটেডে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল পাগলের বেশে নগ্ন হয়ে একই কায়দায় দেয়াল ভেঙে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। এরপর সেখানে রাখা ৩২ টি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। পুলিশ সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ ডাকাতদের শনাক্ত করে। পরে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো গ্রেপ্তাকৃতরা হলেন- নুরু জামাল, আসলাম জমাদার, রফিকুল ইসলাম ওরফে রউফ ও খোকন মল্লিক। ৩২টি ল্যাপটপের মধ্যে উদ্ধার করা হয় ১২টি। বাকিগুলো উদ্ধারে অভিযান চলছে।

শুধুু এই দুটি নয় রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান, বনানী, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় প্রায়ই এ রকম দুঃসাহসিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। বিশেষ করে দেয়াল ভেঙে ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার ঘটনাটি আতঙ্কজনক বলে মনে করছেন অনেকে। এর আগেও বাড্ডায় সমশের গ্রুপের অফিসের দেয়াল ভেঙে প্রবেশ করে কয়েক কোটি টাকা লুট করে নিয়েছিল ডাকাতরা। সেই সময় কয়েকজন ডাকাত গ্রেপ্তার হলেও পুরো টাকা উদ্ধার হয়নি। এরপর ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা আরো উদ্বেগজনক বলছেন অনেকে।

ব্যবসায়ী কায়সার মাহমুদ বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। সন্ধ্যা রাতে এমন দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সচেষ্ট থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা না পেলে তারা ব্যবসা করবেন কিভাবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে আরো আন্তরিক হতে হবে।

বাড্ডা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের ওই উপ-শাখা থেকে টাকা লুটের পরিকল্পনা করছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার দেওয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু তারা কিছু লুট করতে পারেনি। তার আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের সাইনবোর্ডের দেওয়াল ভেঙে ভেতরে হূদয় ঢোকেন। তিনি শাবল দিয়ে ব্যাংকের একটি ভল্ট ভেঙে ফেলেন। বিষয়টি ব্যাংকটির হেড অফিসের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেয়। পরে আমাদের টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যাংকের ভেতর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। হূদয়ের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী রুবেল ও মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, গত ৯ নভেম্বর রাতে গুলশান এলাকায় ব্র্যাক আইটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ৩২টি ল্যাপটপ চুরি হয়। এ ঘটনায় গুলশান থানায় চুরি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে দেখা গেছে, পাগল সেজে বিবস্ত্র হয়ে তারা ওই ল্যাবে ঢোকে এবং একজন আরেকজনের হাতে ল্যাপটপগুলো দিচ্ছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গ্রেপ্তারকৃতদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাতে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তারা দীর্ঘদিন ধরে গুলশান, বনানী, গাজীপুরের গাছা এবং টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকায় চুরি করে। এদের আরো নেটওয়ার্ক রয়েছে। আমরা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিজাত এলাকাকে কেন্দ্র করে চোর-ডাকাতরা সক্রিয় রয়েছে। মাঝে মধ্যেই তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চুরি ডাকাতি করছে। এর আগে ভোরে বাড্ডায় বিকাশের এক দোকান থেকে কয়েক লাখ টাকা লুট হয়। বনানীতে রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে ঢুকে গুলি করে হত্যার পর টাকা লুটের  ঘটনা ঘটে। গুলশান, বনানী, মহাখালি, কাকলি, বাড্ডা ও ভাটারা কিছু এলাকাকে ঘিরে চোর-ডাকাতের বিশেষ তৎপরতা রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়।

জানা যায়, গাজীপুর, টঙ্গি, রুপগঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি এলাকা এ ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটটি চুরি-ডাকাতিসহ ছিনতাইও করে থাকে।

এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি দুটি ঘটনার আমরা রহস্য উদ্ঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে এ দুই ঘটনার গ্রেপ্তারকৃতরাও রিমান্ডে রয়েছে। তাদের নিকট থেকে আমরা তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে কিছু অপরাধাীচক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটালেও তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads