• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
 অপার সম্ভাবনার যেন অপমৃত্যু না হয়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু-পায়রা সমুদ্রবন্দর

অপার সম্ভাবনার যেন অপমৃত্যু না হয়

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০২২

আজ জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বাঙালির অমর কাব্যগাথা পদ্মা সেতুর। এতদিন গর্ব করে বলতাম আমাদের স্বপ্নের সেতু। আজ থেকে স্বপ্ন মুছে গিয়ে হয়েছে বাস্তবতার অহঙ্কারাপ্লুত বিশ্বখ্যাত পদ্মা সেতু। কিছুকাল আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন পায়রা সমুদ্রবন্দর।

একদা নদ-নদী মেঘলা সমুদ্রের আদুরে কন্যা আউল-বাউল বালাম-বাসমতীর দেশ বরিশাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছিল সকল দিক থেকে অবহেলিত। আগা বাক্কারের স্মৃতিবিজড়িত, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের পবিত্র পাদপীঠ ও বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের পবিত্র জন্মভূমি সকল দিক থেকেই ছিল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিষ্পেষিত। এ কথাও স্মরণে রাখতে হবে সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর আদুরে কন্যা শেখ হাসিনাও কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসী।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলের স্বাভাবিক উন্নয়নের স্পর্শে এই অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল নতুন প্রাণাবেগে স্পন্দিত হয়ে ওঠে। তবে পায়রা সমুদ্রবন্দর ও পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার পর শুধু দেশের দক্ষিণাঞ্চলই নয়, গোটা বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে এক অনন্য উচ্চতর শিখরে পদার্পণ করেছে।

ভূমি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু থেকে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত এখনই ইজারাযোগ্য খাস জমির পরিমাণ দু লাখ একরেরও অধিক। এছাড়াও ব্যক্তিমানুষের আয়ত্তে রয়েছে আরও কয়েক লাখ একর জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর রূপকল্প-২০২১ সাল বাস্তবায়নের পর এখন হাত দিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১-এ। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে আমাদেরকে নির্মাণ করতে হবে সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া ও ব্যাংককের মতো পরিকল্পিত কল-কারখানাসমৃদ্ধ বিশাল নগর। আর এই সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে। এই অঞ্চলের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে আমরা যদি আমাদের গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী বিশাল বিশাল আধুনিক আবাসিক সুবিধাসহ শ্রমিক কল্যাণমুখী কারখানা গড়ে তুলতে পারি, তাহলে দেশের দূর-দূরান্তে প্রস্তুত শিল্পসম্ভার কনটেইনারে বহন করে চট্টগ্রাম বা চালনা পোর্টে নিতে হয় না। এতে বিপুল পরিমাণ যাতায়াত খরচ ও সময় বেঁচে যাবে। একই সাথে বিভিন্নভাবে বিশাল বিশাল কনটেইনার ডিপো স্থাপন করে সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমে আসবে।

তবে আমাদের ভাগ্যে মাঝেমধ্যে সুখ সয় না। আমরা যেখানে একটি মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ঘিরে অবস্থিত লাখ লাখ একর জমিতে আবাসিক, কল-কারখানা বিশেষ করে আমাদের গৌরবময় পোশাকশিল্প ও রপ্তানিমুখী কল-কারখানা নির্মাণ করে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক-হংকংয়ের চেয়ে আকাশছোঁয়া নগরী তৈরি করতে সক্ষম, সেখানে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দর ও পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের সাথে সাথেই শ্যেনদৃষ্টি পড়েছে ভূমিদস্যু ও অর্থলোলুপকারীদের। সায়েদাবাদ থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তর পর্যন্ত সকল জমির হরিলুট শুরু হয়েছে। পাঁচতারা-তিনতারা হোটেল, মোটেল, বিলাসবহুল বালাখানা, রিসোর্ট, কটেজ, আবাসকেন্দ্র, আবাসিক এলাকা প্রভৃতির হাজার হাজার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে। দৃষ্টিশক্তি যতদূর যায় কেবল সাইনবোর্ড আর সাইনবোর্ড। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একই সাথে অর্থগৃধ্নুদের সহায়তায় ভুয়া দলিল বানিয়ে সকল সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা চলছে। দখলও হয়ে গেছে অনেক জায়গা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সিঙ্গাপুরের মতো আকাশচুম্বী অট্টালিকাঘেরা আধুনিক কল্পিত নগরী না হয়ে আমাদের অপার সম্ভাবনার দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উঠবে ঘিঞ্জি বস্তিঘেরা নোংরা শহর ও জনপদ।

তাই সরকারের উচিত হবে এই মুহূর্তে পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দরজুড়ে সকল প্রকার সরকারি ও বেসরকারি জমির কেনাবেচা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া; হাজার হাজার রং-বেরঙের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে জমি দখলের তৎপরতা বন্ধ করা।
বিশ্বখ্যাত পরিকল্পনাবিদ ও নগর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে তুলতে হবে নতুন বাংলাদেশ। কেবল তখনই হবে উন্নত বাংলাদেশ ২০৪১-এর সফল বাস্তবায়ন। লক্ষ রাখতে হবে কঠোরভাবে ভূমিগ্রাসকারীদের অপতৎপরতা পদ্মা সেতু ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা আমাদের উন্নয়নের অপার সম্ভাবনাকে যেন কোনোক্রমেই ম্লান করে দিতে না পারে, বানচাল করতে না পারে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads