• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
জেলে পরিবারে বইছে সুবাতাস

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

বাংলাদেশ

জেলে পরিবারে বইছে সুবাতাস

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০২২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চারদিকে শুধু পানি থৈ থৈ করছে। নদী,খাল বিল জলাশয়ে পানি থাকায় স্বপ্ন বুনছেন জেলেরা। মাছ ধরা,বিক্রি ও জাল মেরামত নিয়ে তারা যেন এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিন রোদ বৃদ্ধি মাথায় নিয়ে নদী,খাল বিল জলাশয় থেকে মহানন্দে ধরছেন মাছ। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে জেলে পরিবারের মাঝে বেইছে এক প্রকার সুবাতাস। এখন নেই তাদের কোন অভাব অনটন।

এ উপজেলার ভবানিপুর, টেংরাপাড়া, দূর্গাপুর, আমোদাবাদ, ধরখারসহ প্রায় দুশতাধিক জেলে নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে জাল দিয়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরছেন। জেলে পরিবারের লোকজন বলছে তারা দীর্ঘ বছর ধরে তাদের বাপ-দাদার মাছ ধরাকেই পেশা হিসাবে ধরে রেখেছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় তারা কৃষিসহ অন্যান্য কাজ করে থাকে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ মাস পানি থাকায় জাল দিয়ে তারা মাছ ধরে থাকেন। দৈনিক ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার উপর আয় হয়। ওইসব গ্রামে বাড়ির চারদিকে পানি হওয়ায় অন্য পেশায় না গিয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজন মেটানোর জন্যই মাছ ধরে আসছেন। বর্তমানে চারদিকে পানি থৈথৈ করায় মাছ বিক্রির মাধ্যমে আয় উপার্জন বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এখন মহাখুশি।

সরেজমিনে উপজেলার বনগজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জেলে পরিবার মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ সুই সুতা দিয়ে জালের খারাপ অংশ মেরামত করছেন, কেউ বা জাল শুকিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। সেইসাথে কেউ আবার ওইসব ধরা মাছগুলো বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। মাছ ধরা বিক্রি, জাল মেরামতসহ সব মিলিয়ে তাদের যেন ব্যস্তাতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ১০২.১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে মোট গ্রাম রয়েছে ১৩০টি। এরমধ্যে ছোট বড় পুকুরসহ প্রজেক্ট রয়েছে ১ হাজার ৬৩২টি, বিল রয়েছে ১৩টি ও নদী রয়েছে ৩টি। তাছাড়া কমার্শিয়াল পুকুর রয়েছে ১টি।

এ উপজেলার মধ্যে কাদমা বিল , বোয়াল্লা বিল, কুড়ি বাজার বিল,অতি প্রচীন বিল হিসাবে পরিচিত। ওইসব বিলসহ পুকুর, খাল বিল ,নদী নালা ও জলাশয়ে বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলে মাখন দাস বলেন গত ৩০ বছর ধরে তিনি পেশার সাথে জড়িত আছেন । নতুন পানি আসায় গত প্রায় ১ মাস ধরে তিনি জাল মাছ ধরছেন। তিনি আরো বলেন বছরের প্রায় ৪-৫ মাছ জাল দিয়ে মাছ ধরা যায়। বাকি সময় অন্যের চাষকৃত পুকুর বা জলাশয়ে চুক্তিতে মাছ ধরার কাজ করছেন। এখন চারদিকে পানি থাকায় সকাল বিকাল জাল দিয়ে মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। এ কাজে তার দুই ছেলে সহযোগিতা করছেন। জাল দিয়ে মাছ ধরে দৈনিক ২ হাজার টাকার উপর মাছ বিক্রি হয় বলে জানায়।

কার্তিক দাস বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪-৫ মাছ ধরছেন। ওই সময় তার পরিবারে কোন অভাব অনটন থাকে না। পানি চলে গেলে অনেকটাই তার বিপাকে পড়তে হয়। তাই পারি না থাকলে বাকী সময় তিনি শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন পানি থাকায় জাল দিয়ে মাছ ধরায় খুবই ভালো লাগছে বলে জানায়।

সুমন বর্মণ বলেন, ছোট বেলা থেকে তিনি বাপ দাদার সাথে খাল, বিল ও নদীতে মাছ ধরার কাজ করে আসছেন । সময় মতো পানি না হওয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। দৈনিক জাল নিয়ে বের হলে জনপ্রতি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা আয় হয় বলে জানায়।

মিলন চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৪-৫ মাছ ধারা যায়। ওই সময় ভালো ভাবেই চলে তার সংসার। কিন্তু পানি চলে গেলে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় তখন কৃষিকাজসহ এলাকায় শ্রমিকের কাজ করে থাকেন। এখন পানি থাকায় অন্য কাজ ছেড়ে দিয়ে মাছ ধরছেন। মাছ ধরে সে দৈনিক ১ হাজার টাকার উপর আয় করা যায়।

স্বপন দাস বলেন, টাকার অভাবে অন্য কোন পেশায় যাওয়া যায় নি। এক প্রকার বাধ্য হয়ে বাপ দাদার পেশাকে আকড়ে ধরে আছি। কিন্তু পানির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে মাছ ধরতে না পারায় খুবই কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই কষ্ট আর নেই। দৈনিক জাল নিয়ে বের হলে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করা যায় বলে জানায়।

প্রদীপ দাস বলেন, রাতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সকালে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। বাজারে সকালে মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে। অনেক সময় লোকজন মাছ নৌকা থেকেই কিনে নিয়ে যায়। তিনি বলেন জাল দিয়ে মাছ ধরতে ৪ জন শ্রমিক লাগে। তাদের মজুরি দিয়ে দৈনিক ১২শ থেকে ১৫শ টাকা আয় হয়।

তিনি জানান, বাপ-দাদাকে দেখে তিনি মাছ শিকার কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মাছ ধরা এখন তার নেশা ও পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি থাকলে নিজের মতো করে জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। আর না থাকলে চাষকৃত পুকুর প্রজেক্টে চুক্তিতে মাছ ধরে দিচ্ছেন। মাছ ধরা ও বিক্রি নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে হয় বলে জানায়।

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.রেজাউল করিম বলেন, এ উপজেলার ১৪৩০ জন নিবন্ধিত মৎস্যজীবী রয়েছে। ওই সমস্ত মৎস্যজীবীদের মাঝে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বড় নেট জাল ছাড়া নদী খাল জলায়শয় থেকে ছোট নেট ও চট জাল দিয়ে পোনা মাছ না ধরতে বলা বলা হয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট ও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন পোনা মাছ সংরক্ষণ করা গেলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য সকলের সচেতনতা হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads