• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ডিএসইর অনাপত্তিপত্র ছাড়াই কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন

ডিএসইর অনাপত্তিপত্র ছাড়াই কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি

ছবি: সংরক্ষিত

পুঁজিবাজার

ডিএসইর অনাপত্তিপত্র ছাড়াই কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন

  • আলতাফ মাসুদ
  • প্রকাশিত ২৪ জুলাই ২০১৮

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন করা কোম্পানির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। আইপিওর আবেদন করা কোম্পানির খসড়া প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে অনাপত্তিপত্র দেয় স্টক এক্সচেঞ্জ। খসড়া প্রসপেক্টাসে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি ও উৎপাদন খরচসহ চারটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ না পাওয়ায় কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেডের আইপিওতে অনাপত্তিপত্র দেয়নি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে ডিএসইর অনাপত্তিপত্র ছাড়াই এ কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

অবশ্য আইপিওর আবেদন করা কোম্পানির খসড়া প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে স্টক এক্সচেঞ্জ যে পর্যবেক্ষণ বিএসইসিতে পাঠায়, তা আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির। যদিও পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় থাকা কোম্পানির জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বিএসইসির এক নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানির প্রসপেক্টাস জমা দেওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে বিএসইসিতে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে হয় স্টক এক্সচেঞ্জকে। আইপিও আবেদন যাচাই-বাছাই করতে স্টক এক্সচেঞ্জের বিশেষজ্ঞ প্যানেলও রয়েছে।

২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে ডিএসইতে আইপিও আবেদন করে কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেড। এরপর ডিএসইর লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং বিভাগ কাট্টালি টেক্সটাইলের খসড়া প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে। তাদের পর্যালোচনায় কোম্পানির ২০১৭ সালের হিসাব বছরের বার্ষিক বিক্রি, উৎপাদন ব্যয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে কোম্পানির নগদ প্রাপ্তি এবং সরবরাহকারী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নগদ প্রদান বিষয়ে প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত তথ্য বিষয়ে সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কোম্পানির কাছে উল্লিখিত বিষয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন- টার্নওভার বিষয়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, এলসি ডকুমেন্ট, বিল অব এন্ট্রি, ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ সংশ্লিস্ট নথি চেয়ে পাঠায় ডিএসই। তবে কোম্পানি ডিএসইকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে ডিএসই কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিওতে সুপারিশ বা অনাপত্তিপত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে হঠাৎ করেই কোম্পানির বার্ষিক বিক্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তনে ডিএসইর মধ্যে সন্দেহ তৈরি করে। কাট্টালি টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরে কোম্পানির বার্ষিক বিক্রি ছিল ৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা পরের বছর ২০১৭ সালে ৫৯ কোটি ৫২ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির বিক্রি বাড়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে উৎপাদন ব্যয়ও প্রায় ২২ শতাংশ বাড়ে। ২০১৭ সালে কাট্টালি টেক্সটাইলের মোট আয় হয় ১৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৭ সালে পরিচালন মুনাফা দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

আইপিও আবেদনের আগে ২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরে কাট্টালি টেক্সটাইলের নিট মুনাফা দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৬ সালে এ কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর ২০১৫ সালে ৬ কোটি ৭৪ লাখ, ২০১৪ সালে ৬ কোটি ৮২ লাখ ও ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয় কাট্টালি টেক্সটাইলের।

মূলধন সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় থাকা অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিগুলো মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। এসব অভিযোগ থেকেই স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলোর বার্ষিক বিক্রি, ব্যয়, কর প্রদানসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের সুপারিশ প্রদান করে। আইপিও আবেদনকালীন সময়ে কোম্পানির অস্বাভাবিক মুনাফার প্রেক্ষিতে মুনাফা সংশ্লিস্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে না পাওয়ায় কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিওতে সুপারিশ বা অনাপত্তিপত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।

তবে ডিএসই অনাপত্তিপত্র না দিলেও গত ২৬ জুন বিএসইসির কমিশন সভায় কাট্টালি টেক্সটাইলের আইপিও আবেদনে সম্মতি দেওয়া হয়। এর ফলে কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে অভিহিত মূল্যে ৩ কোটি ৪০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি পায়। পুঁজিবাজার থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করে কোম্পানিটি কারখানা ভবন নির্মাণ, কর্মচারীদের জন্য ডরমিটরি ভবন নির্মাণ, বর্ধিত ইউনিটের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, ট্রান্সফরমার ও জেনারেটর স্থাপন, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও খরচ খাতে ব্যবহার করবে। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনায় রয়েছে এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।

প্রসঙ্গত, স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি প্রবিধানমালা অনুযায়ী আইপিও আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবসার ধরন, লাভ-লোকসানসহ যাবতীয় বিষয় পরীক্ষার পর সেগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্যতার বিষয়ে অনাপত্তিপত্র বা এনওসি দিয়ে থাকে স্টক এক্সচেঞ্জ। এরপরই বিএসইসি সেসব আবেদন বিবেচনার জন্য গ্রহণ করে থাকে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করেই আইপিওর অনুমোদন দিতে পারে বিএসইসি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads