• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮

পুঁজিবাজার

অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টদের মত

ইউনিয়নে শেয়ারবাজার নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ১৮ ডিসেম্বর ২০২০

দেশের শেয়ারবাজারকে ইউনিয়ন, সিটি করপোরেশন ও পৌর সদর এলাকার পাশাপাশি বিদেশেও ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ১৪ ডিসেম্বর সোমবার এসংক্রান্ত নীতিমালা ও আদেশ জারি করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। নীতিমালা অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউসগুলো দেশের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের পাশাপাশি বিদেশেও বুথ খুলতে পারবে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও শেয়ারবাজারের উন্নয়নে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএসইসি। স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এখন থেকে বিএসইসি দেশের তৃণমূল পর্যায়ের ব্রোকার হাউসগুলোকে বুথ খোলার অনুমোদন দেবে। বিএসইসির নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের মধ্যে বুথ খোলার ক্ষেত্রে ১ লাখ ও বিদেশে বুথ খোলার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জামানত রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে। ইউনিয়ন পর্যায়ে বুথের মাধ্যমে দিনে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ ২ লাখ এবং সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকার বুথে দিনে সর্বোচ্চ পৌনে ৯ লাখ টাকার লেনদেন করতে পারবেন। আর বিদেশে স্থাপিত বুথের ক্ষেত্রে লেনদেনের এ সীমা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এদিকে, ইউনিয়ন পর্যায়ে শেয়ারবাজার ছড়িয়ে দেওয়ার এই উদ্যোগকে ভিন্ন চোখে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে। বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকীর মতে, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত শেয়ারবাজার নিয়ে যাওয়ার সময় ও বাস্তবতা এখনো তৈরি হয়নি। বড়জোর বড় শহরে এ ধরনের বুথ করার অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। তবে তিনি বিদেশে বুথ স্থাপনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেননি। তার মতে, যদি এর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ আসে, সেটি ভালো। তবে সেজন্য পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি দেশে বুথ করার পর তার ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যেখানে শেয়ারবাজারকে কেন্দ্রীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেখানে বৃহৎ পরিসরে শেয়ারবাজার পরিচালনার সিদ্ধান্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের মতে, ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে  শেয়ারবাজার ভঙ্গুর অবস্থা থেকে এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ২০১০ সালের ধসের কারণে পুঁজি হারানো অসংখ্য বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজি আর ফিরে পায়নি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার স্বজনপ্রীতি আর কারসাজি ঠেকানোর সদিচ্ছা ও দক্ষতার অভাবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। সেই থেকে পুঁজিবাজার অদ্যবধি মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুল মজিদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বাজারের যে বৈশিষ্ট্য এবং শেয়ার মার্কেট ম্যানিপুলেশনের যে মনোবৃত্তি তাতে করে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিলে বৃহৎ পরিসরে বাজার নিয়ন্ত্রণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীভূত বিনিয়োগ ব্যবস্থার তুলনায় বিকেন্দ্রীভূত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রসারিত করতে পারলে বিনিয়োগের পরিবেশের জন্য এ ভালো। সেদিক বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার অক্ষমতা, অদক্ষতা কিংবা পক্ষপাতিত্বের কারণে অতীতে শেয়ারবাজার বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছিল। রেগুলেটরি সংস্থা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সবার প্রতি সমানভাবে আচরণ না করার কারণে সে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার মধ্যেই নতুন করে দেশব্যাপী শেয়ারবাজার ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে পড়বে।’ 

অর্থনীতিবিদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অনেকে মনে করেন শেয়ারবাজার শিক্ষিত লোকের। অল্প শিক্ষিতরা এটি বুঝেন। কিন্তু পুঁজিবাজার ক্ষতি করেছে মূলত শিক্ষিতশ্রেণির লোকেরাই।’ তার মতে, পুঁজিবাজারের ক্ষতিটা হয় যোগসাজশের মাধ্যমে। দুষ্টবুদ্ধির লোকেরাই মূলত শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করেছে। তাই, নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পক্ষপাতিত্ব ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে শেয়ারবাজার বিকেন্দ্রীকরণের এই সিদ্ধান্ত থেকে সুফল মিলবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। নচেৎ বর্তমান অবস্থার তুলনায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে শাখা খোলার অনুমোদন দেওয়ার দাবি ছিল। বিগত কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়নি। গত মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে বিএসইসি পুনর্গঠনের পর নতুন কমিশন শেয়ারবাজারকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করার নানা উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ডিজিটাল বুথ চালুর নীতিমালা ও আদেশ জারি করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads