• শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জৈষ্ঠ ১৪২৯
দিনে ১১ কোটি টাকা চাঁদা

রাজধানীর গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজারের সামনে চাঁদা দিচ্ছেন এক মিনিবাস চালক

বাংলাদেশের খবর

যোগাযোগ

দিনে ১১ কোটি টাকা চাঁদা

পরিবহন শ্রমিকরা ১১৩ টার্মিনাল-স্টপেজে ২৪৯ ইউনিয়নকে টাকা দিচ্ছেন

  • শরীফ খিয়াম
  • প্রকাশিত ০৫ জুন ২০১৮

সারা দেশের ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের কাছ থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা চাঁদা তুলছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। এই হিসাবে নিজেদের সংগঠনকে বছরে ৩ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা অবৈধ চাঁদা দিচ্ছে পরিবহন শ্রমিকরা। পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত এই সংগঠন তাদের আওতাভুক্ত ২৪৯টি ইউনিয়নের মাধ্যমে এই টাকা আদায় করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থি সংগঠন সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ এই চাঁদাবাজিকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে আখ্যায়িত করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন দাবি করেছে, সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে সংগঠন চালাতে এই চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামীপন্থি সংগঠন সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইনসুর আলী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী ফেডারেশন বার্ষিক বা মাসিক কিস্তিতে ইউনিয়নের কাছ থেকে চাঁদা নিতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, টার্মিনাল থেকে গাড়ি ছাড়লেই তারা (ফেডারেশন) শ্রমিকের, এমনকি মালিকের চাঁদাও নিয়ে নিচ্ছে।’ শ্রম আইন না মেনে এভাবে দৈনিক চাঁদা নেওয়ার অধিকার তাদের নেই উল্লেখ করে ইনসুর জানান, দেশের ১১৩টি ছোট-বড় টার্মিনাল ও স্টপেজে এই চাঁদাবাজি হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই।

ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী অবশ্য বলেন, ‘এমন অভিযোগ শুধু ইনসুর আলীই করেন। চাঁদাবাজির এই টাকা কোন ব্যাংকে কার অ্যাকাউন্টে আছে সেটা তিনি দেখাক।’ বাংলাদেশের খবরকে তিনি আরো বলেন, ‘আইনবহির্ভূত চাঁদাবাজির সঙ্গে মূলত যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের পাতিনেতারা জড়িত থাকেন। সরকার যেকোনো সময় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলে ফেডারেশন সঙ্গে থাকবে।’

অন্যদিকে ফেডারেশনের বিদ্যমান কমিটি ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ দাবি করে ইনসুর বলেন, ‘অবৈধ কমিটি অবৈধ নেতৃত্বে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে।’ এ বিষয়ে ওসমান আলীর জবাব, ‘উনি আমাদের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে জানেন না।’ ওসমান জানান, ‘ঢাকার চারটি টার্মিনালসহ সারা দেশের ইউনিয়নগুলোর মাধ্যমে আইন মেনেই চাঁদা তুলছে ফেডারেশন।’ ইনসুর বলেন, ‘যার দায়িত্বে চাঁদা তোলা হচ্ছে তার একটা ভাতা আছে, এরপর হয়তো কিছু পুলিশকে দেয়। বাকি যেটা থাকে সেটা কর্তৃপক্ষের হাতে যায়। তারপর নানাভাবে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে।’ আর ওসমান বলেন, ‘যারা টাকা তোলে তারা পাঁচ টাকা রেখে শ্রমিক ফেডারেশনকে পাঁচ টাকা দেয়- যা দিয়ে সংগঠনের পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করা হয়।’ মালিক সমিতির নামে নেওয়া চাঁদার হার ভিন্ন উল্লেখ করে ইনসুর জানান, ‘যেখানে যাত্রী বেশি, সেখানে চাঁদার ডিমান্ড বেশি। বাসপ্রতি ন্যূনতম ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়।’ তবে ইনসুরের হিসাবের সঙ্গে একমত নন ওসমান।

সরেজমিন ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে গিয়ে দূরপাল্লার বাস থেকে চাঁদা আদায়ের দৃশ্য দেখা যায়। পরিবহন শ্রমিকরাও স্বীকার করে বিভিন্ন হারে ইউনিয়ন, ফেডারেশন ও মালিক সমিতিকে চাঁদা দেওয়ার কথা। নগর পরিবহন থেকেও প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় হচ্ছে। আট বছর ধরে মিরপুর-গুলিস্তান রুটে মিনিবাস চালাচ্ছেন ৩২ বছরের যুবক মোহাম্মদ বশির। তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপকালেই তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়, যার ভিডিওচিত্র এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। বশির জানান, এই রুটে দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রথম শিফট সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত, বাকিটা শেষ শিফট। গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজারের সামনে এবং মিরপুরে ১০ নম্বর গোল চত্বরে তাদের চাঁদা দিতে হয়। একইভাবে চাঁদা দেওয়ার কথা জানান বিভিন্ন রুটের লেগুনা সার্ভিসের চালকরাও।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘কোনো ইউনিয়নের বা ফেডারেশনের বিরুদ্ধে বেশি চাঁদা নেওয়া বা লুটপাটের অফিসিয়াল অভিযোগ আমরা পাইনি। অর্থাৎ সংগঠনের সদস্যরা এমন কোনো অভিযোগ করেননি। শ্রমিক ফেডারেশনের চাঁদা নেওয়ার নিয়ম আছে, তারা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা নিতে পারে তাদের সদস্যদের কাছ থেকে, এটা আইনসিদ্ধ।’ তবে সড়ক পরিবহন সেক্টরের শ্রমিকরা মন্ত্রণালয়ের আওতায় আসেনি উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনগুলো চাঁদার পয়সা নিজেদের মতো খরচ করছে। এ বিষয়ক একটি আইন অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে। সেটির ব্যাপারে তাদের আগ্রহ নেই।’ টার্মিনালভিত্তিক চাঁদাবাজির ব্যাপারে মুজিবুল হকের বক্তব্য, ‘ট্রেড ইউনিয়নের নামে চাঁদাবাজি না হলে তা ঠেকানোর ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের এগিয়ে আসতে হবে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads