• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
ভারতীয় ঋণে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

ভারতীয় ঋণে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন নির্মাণ

ঈশ্বরদী ঢালারচর রেললাইনে বাড়তি ব্যয় ৭৭ শতাংশ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০১৮

রাজধানীসহ সারা দেশের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগের দূরত্ব কমাতে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটে নতুন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পৃথক প্রকল্প উঠছে একনেকে। এতে ভারত সরকার ঋণ দেবে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। রেললাইনটি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমাবে ১১২ কিলোমিটারের বেশি, সময় বাঁচবে প্রায় ৫ ঘণ্টা।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় মেইন ও লুপ লাইন মিলিয়ে মোট ১০২ কিলোমিটার রেলট্র্যাক, ৭৬৮ কিলোমিটার রেলব্রিজ, ২৫০ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট, ৬৫০ মিটার ৪ লেনের রোড ওভারপাস নির্মাণ, ৯৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ১০টি স্টেশন সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরি  করা হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পরেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটে রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে নানা কারণে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে উত্তরঙ্গের ট্রেনগুলো সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকা চলাচল করে। মোট দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ৪৫০ কিলোমটার। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার ঘুরপথ। সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে দেশকে যুক্ত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক যোগাযোগে বিকল্প রেল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ভবিষ্যতে রাজবাড়ী পর্যন্ত রেল নির্মাণের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প পথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা পাবে। তাছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমেই পাবনা জেলা শহর রেলপথের আওতায় আসবে।

শুরুতেই ধীরগতির কারণে ২০১৩ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি সংশোধন করে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ওই সময়ে এর ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে আবারো দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর চলতি বছরের আগস্ট মাসে একনেকে আসে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব। অবশ্য এ প্রস্তাব অনুমোদন না করে প্রকল্পটি আগের ব্যয়ে শেষ করার নির্দেশ দিয়ে ফেরত পাঠান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্প শেষ হলে কতটুকু কাজ বাকি থাকবে তা জানতে একটি কমিটিও গঠনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে জানায়, সরকারের আইন পরিবর্তনের কারণে বাড়তি ভ্যাট ও কর পরিশোধের প্রয়োজন না হলে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রয়োজন ছিল না। তাছাড়া আগের চুক্তির আওতায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্প সংশোধন না হলে তাদের বিল আটকে যাবে। এসব কিছু বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। ২০১৫ সালের মধ্যে ৭৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দুইবার। সর্বশেষ সংশোধিত মেয়াদ উত্তীর্ণ স্থবির প্রকল্পটি নামমাত্র ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় আরেক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এ হিসাবে প্রকল্পে বাড়তি সময় লাগছে চার বছর।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রস্তাবিত ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটির সংশোধনী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। ২০১০ সালে ৯৮২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে ৭৫৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির হার প্রায় ৭৭ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads