• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
সরকারের নতুন উদ্যোগ

বাংলাদেশ বিমান

ছবি : সংগৃহীত

যোগাযোগ

বিমানকে ঢেলে সাজাতে

সরকারের নতুন উদ্যোগ, পর্নোগ্রাফী বানাবে তথ্য মন্ত্রণালয়

বিমানবন্দর, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও চলাচলের মানদণ্ড পর্যালোচনা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০১৯

বেসামরিক বিমানের নানান বিষয়ে অসঙ্গতি সামনে আসার পর এর কার্যক্রমকে আরো ঢেলে সাজাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বিমানবন্দরের কারিগরি ও প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। 

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত ফেব্রুয়ারির ২৪ তারিখের ওই ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীকে বেশকিছু পরামর্শ দিয়ে বিমানকে ঢেলে সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক করে করণীয় ঠিক করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

সূত্র বলছে, বিমানের সব ফ্লাইট নিরাপদ করতে চায় সরকার। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানের ফ্লাইট ও বিমানবন্দরগুলোকে নিরাপদ করতে নির্দেশ দেন। এরপর দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুশাসনের পর ঘটেছে বেশকিছু ঘটনাও। যাতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বিমানবন্দর ও বিমানের ফ্লাইটগুলো। সর্বশেষ বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

জানা যায়, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক উইং কমান্ডার চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক সাবেক এয়ার কমোডর মাহবুব জাহান খান ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সিনিয়র সিকিউরিটি পরামর্শক সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আলমগীর। কমিটিকে প্রথম ধাপে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে কমিটির প্রস্তাবে আরো দুই কর্মদিবস বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সে হিসেবে আগামীকালের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

কমিটির একটি সূত্র বলছে, তদন্ত কমিটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রমে গাফিলতি পেয়েছে। সেটি তাদের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে দুই দফা কমিটির সদস্যরা চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছে।  

জানা যায়, আগামী ১০ মার্চ একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। সেখানে বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিমান পরিদর্শন কার্যক্রমের মানদণ্ড পর্যালোচনা করা হবে। কোনো ফ্লাইট ছাড়ার আগে পুরো কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সম্পাদনা করা হয় কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে একটি হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে।  

জানা গেছে, জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময়সহ একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে নিরাপত্তায় অবহেলার ঘটনা ঘটে। একবার ফ্রিডম পার্টির এক সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের ক্রুর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর। সেই দিন হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণ করে। পরে প্রমাণ মেলে মনুষ্যসৃষ্ট ভুলের জন্য বিমানটির যান্ত্রিক ত্রুটি হয়। এর আগে ৮ জুন সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীরা। তাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার মুহূর্তে পাইলট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ‘ধাতব বস্তু’ দেখতে পান। রানওয়ে থেকে ধাতব বস্তু সরানোর পর প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট অবতরণ করে।

জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে বেশকিছু সমস্যা আছে। সেগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। অনেকটা চিহ্নিত করা হয়েছে। আরো কাজ চলছে। সরকার বিমানকে নিয়ে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই সেসব কাজের সুফল দৃশ্যমান হবে আশা করি।

জানা যায়, বিমানের ফ্লাইটগুলোতে চোরাচালানের মতো ঘটনাও ঘটে। বিশেষ করে সোনা চোরাচালানে ব্যবহূত হয় বিমানের বিভিন্ন ফ্লাইট। এদিকেও সরকার এবার নজর দিচ্ছে।

বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় কালো মেঘ দেখা দিয়েছে বিমান চলাচলে দেশকে ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নে। যার ফলে হোঁচট খাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অভিপ্রায় ও স্বপ্ন।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা দেশে ও বিদেশে ভাবমূর্তি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রম। বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে খারাপভাবে সামনে এলো। যেমনটি হলি আর্টিজান ঘটনার পর পড়তে হয়েছিল। ওই ঘটনার পর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অবস্থান করা অনেক বিদেশি নাগরিক ফিরে যান নিজেদের দেশে, যা কি না অগ্রগতির পথে বাধা বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তবে বেসামরিক বিমানে সরকারের এই নতুন উদ্যোগ সাফল্য নিয়ে আসবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads