• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
কোন রুটে কোন বাস

সংগৃহীত ছবি

যোগাযোগ

কোন রুটে কোন বাস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০২০

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ অনেকটা এগিয়েছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। এরই মধ্যে কমিটির কাছে সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে চলাচলরত আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার পরিবহনের পরিবর্তে ৯ হাজার ২৭টি গণপরিবহন পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা পদ্ধতি প্রবর্তনের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন করার জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন দক্ষিণ সিটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এরপর কমিটি বাস্তবতা সমীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে সমীক্ষা করে কমিটি গত ১০ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়।

সুপারিশে বলা হয়, এখনকার আড়াই হাজার কোম্পানির পরিবর্তে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে ৯ হাজার ২৭টি বাস পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ছয় হাজার ৪৫৭টি বাস ও দুই হাজার ২৭০টি মিনিবাস থাকবে। ৩ হাজার ৭৬১টি সম্পূর্ণ নতুন বাস রাখা হবে। এসব কোম্পানিতে গণপরিবহন মালিকরা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে থাকবেন। সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কোম্পানিতে ৫০০টির কম গণপরিবহন রাখা হবে। কোম্পানিগুলোকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ৫ বছরের বেশি পুরনো বাস রাখা হবে না।

৪২টি রুটে ৬ রঙের বাস

এখন ঢাকায় ২৯১টি রুটে গণপরিবহন চলছে। নানা রঙের পরিবহনের মধ্যে গণপরিবহন বেছে নেওয়া কঠিন। সড়কে বিশৃঙ্খলার এটাও একটা কারণ। এর ফলে যানজটসহ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট ৬টি রঙের গণপরিবহন পরিচালনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবে রুটগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আরবান, সাব-আরবান ও ঢাকা চাকা ক্লাস্টার। কোন ক্লাস্টার কোন অঞ্চলে ও কোন রঙের বাস কোন কোন রুটে চলবে সেই তালিকা এই প্রতিবেদনের শেষাংশে যুক্ত করা হয়েছে।

জেলার বাস ঢাকায় ঢুকবে না

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাস রুট রেশনালাইজেশনের জন্য জেলা পর্যায়ের কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে পর্যাপ্ত টার্মিনাল ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

কী হবে বিদ্যমান বাসের?

২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে নগরীতে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা ৩০ হাজার ২৭৪টি। এখন তা আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান বাসগুলোর মূল্যায়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোতে মালিকানার ভাগ নির্ধারণ করা হবে। এসব বাস ও মিনিবাস স্ক্র্যাপ করা হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। এ ছাড়া নতুন বাস সংগ্রহের জন্য ৪-৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

টিকিটিং : স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে বাসগুলোতে টিকিটিং সিস্টেম করা হবে। পাশাপাশি ভাড়া নীতিও প্রণয়ন করা হবে। এতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভাড়া আদায়ের সিস্টেম থাকবে না। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারদের বািবতণ্ডার অবকাশ থাকবে না।

ঢাকার বাইরে ১০ টার্মিনাল : রাজধানীর ৩টি টার্মিনালে দেড় হাজার বাসের ধারণক্ষমতা থাকলেও তাতে প্রতিদিন ৯ হাজার ২৯৮টি বাস রাখা হয়। বাকি বাসগুলো নগরীর বিভিন্ন সড়কেই পার্কিং করা হয়। যানজটের এটাও একটা বড় কারণ। এ অবস্থায় নতুন করে ১০টি টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কেরানীগঞ্জের বাঘৈর (৩৩.৬৩ একর), হেমায়েতপুর (৩৬.৫০ একর), উত্তরার ভিরুলিয়া (১৪.৫৩ একর), গাজীপুর (১১.৭০ একর), নবীনগর-চন্দ্রা রোডের বাইপাইল (৪০.৪০ একর), কাঞ্চন এলাকা (২৪.২৪ একর), কাঁচপুর উত্তর (১৫.৪৬ একর), কাঁচপুর দক্ষিণ মদন (২৭.৭১ একর), আটিবাজারের ভাওয়াল (২৫.৭৮ একর) এবং ভুলতা (২৪.২২ একর)।

কমিটির সুপারিশ প্রসঙ্গে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই রিপোর্ট আমরা পর্যালোচনা করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে যেসব বাস আসবে সেগুলো শহরের সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্ধারিত টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে দেবে। এরপর সিটি সার্ভিস বা এমআরটি বা অন্য সেবা প্রদানকারী বাহনের মাধ্যমে যাত্রীরা নিজ গন্তব্যে যাবেন। আমরা সেই নিরাপদ ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। এতে ঢাকার মূল শহরের ওপর গাড়ির চাপ কমবে। আগামী বছরের মধ্যেই বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে।’

মেয়র বলেন, ‘এখন ঢাকায় ২৯১টি রুটে বাস চলছে। সেগুলোকে কমিয়ে ৪২টি রুটে আনবো। ২ হাজার ৫০০ বাস মালিককে সন্নিবেশ করে ২২টি কোম্পানি করার প্রাথমিক প্রস্তাব আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন করার জন্য আমরা পরিবহন মালিকরা একমত হয়েছি। আমরা চাচ্ছি সুন্দরভাবে যাতে শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা হয়। এই উদ্যোগ যেন কোনোভাবে ব্যর্থ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

কোন রঙের বাস কোন রুটে?

আরবান ক্লাস্টার (গোলাপি) :  এ রঙের ৮৮৩টি বাস পরিবহনগুলো ১ থেকে ৪নং রুটে চলাচল করবে। বর্তমানের ২৯১টি রুটের মধ্যে ২৩টি রুটকে ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে।

রুটগুলো হচ্ছে

রুট নং ১ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-নাবিস্কো-মগবাজার-কাকরাইল-সায়েদাবাগ/সদরঘাট।

রুট নং ২ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-ফার্মগেট-শাহবাগ-পল্টন-সায়েদাবাদ/কেরানীগঞ্জ জেলখানা/ঝিলমিল।

রুট নং ৩ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ-রেলগেট-মৌচাক-কাকরাইল-গোলাপশাহ মাজার-সদরঘাট/ঝিলমিল।

রুট নং ৪ : আবদুল্লাহপুর-বেড়িবাঁধ, মাজার রোড-গাবতলী-শিকদার মেডিক্যাল-কামরাঙ্গীরচর-বাবু বাজার।

নীল

নীল রঙের এক হাজার ৪৩৩টি বাস ৫ থেকে ৮নং রুটে চলাচল করবে। পুরানো ২১টি রুট ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছে-

রুট নং ৫ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-নতুনবাজার-বাড্ডা-মৌচাক-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাব-আজিমপুর।

রুট নং ৬ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-বিজয় সরণি-মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-সোবহানবাগ-সায়েন্স ল্যাব-আজিমপুর।

রুট নং ৭ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-ফ্লাইওভার-ইসিবি চত্বর-কালশি-মিরপুর ১০-মিরপুর ১-টেকনিক্যাল-গাবতলী-হেমায়েতপুর।

রুট নং ৮ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-শ্যামলী-শিশুমেলা-আগারগাঁও-বিজয় সরণী-মহাখালী-বনানী-শেওড়াপাড়া-কুড়িল-আবদুল্লাহপুর।

মেরুন

এ রঙের এক হাজার ১০৮টি বাস ৯ থেকে ১৩নং রুটে চলবে। পুরনো ৩৫টি রুট ভেঙে এই ৫টি রুট করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads