রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকায় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে সাবাব চৌধুরীর গাড়িচাপায় এক গাড়িচালক নিহতের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন ২০ লাখ টাকা প্রদান ও প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা সহায়তার আশ্বাসে এমপির পক্ষ থেকে এ সমঝোতা করা হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে নিহত সেলিম বেপারির (৪৫) বোনের স্বামী আবদুল আলিম সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার নিহতের পরিবারকে এককালীন ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এমপির লোকজন নাওয়ার প্রপার্টিজের বারিধারা ডিওএইচএসের অফিসে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান স্যারের উপস্থিতিতে আমার হাতে নগদ ২০ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিমাসে ২০ হাজার করে টাকা সেলিমের স্ত্রী চায়না বেপারির হাতে দেবেন।’ আবদুল আলিম আরো বলেন, ‘সমঝোতা হওয়ায় আমরা এখন মামলাটি তুলে নেব। এই সমঝোতার পর আমরা এমপি সাহেবের সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনি কথা দিয়েছেন, যতদিন বেঁচে থাকবে সেলিমের স্ত্রী ততদিন প্রতিমাসে ২০ হাজার করে টাকা দেবেন। এই টাকা প্রতিমাসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেবেন।’
সেলিম বেপারি যে কোম্পানিতে চাকরি করতেন সেই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার প্রথম সমঝোতা বৈঠক হয়েছে। পরের দিন শুক্রবার রাতে এসে তারা নগদ ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা সেলিমের স্ত্রীর নামে একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ডিপোজিট করা হবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সমাধান হয়েছে- এই বিষয়টি আমি জানি না। কে করেছে সেটাও জানি না। তবে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন ওই পরিবারকে সাধ্যমতো সহায়তা করব।
এর আগে ঘটনাটি উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য ২১ জুন রাতে নাওয়ার প্রপার্টিজের বারিধারার অফিসে প্রথম বৈঠক হয়। সেখানে নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান ৩০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক ডিপোজিট করে দিতে বলেন। জবাবে এমপি পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩০ লাখ নয় কিছু টাকা কম দেওয়া হবে। ইমরান জানান, সংসদ সদস্য ইকরামুল করিমের পক্ষ থেকে বলা হয়, সমঝোতার মাধ্যমে নিহতের পরিবারকে টাকা দেওয়া হবে। তবে গাড়িচাপায় নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তুলে নিতে হবে। আর এ ঘটনায় সংসদ সদস্যের পরিবারের কারো জড়িত থাকার কথাও বলা যাবে না।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান রোববার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গাড়িটির মালিকানা নিশ্চিত করা হয়েছে। কে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। গাড়িটি এখনো জব্দ করতে পারিনি। ওটা কোথায় আছে তা বের করতে তদন্তকারী কর্মকর্তা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।’
গত শুক্রবার এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘বিষয়টি তদন্তাধীন। আমরা এখনই সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তদন্তের পরই সবকিছু জানা জানা যাবে। তবে এটুকু বলতে পারি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, তিনি যদি এমপিপুত্রও হন।’
গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে সেলিম বেপারিকে চাপা দেয় ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫ নম্বর গাড়িটি। এটি সাবাবের মা শিউলি বেগমের নামে নিবন্ধিত। সেলিমকে চাপা দেওয়ার পর গাড়িটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ন্যাম ফ্ল্যাটে চলে যান সাবাব। এরপর থেকে গাড়িটি সেখানেই রয়েছে বলে জানা গেছে।
