দেওয়ানগঞ্জের বহুল আলোচিত জোড়া খুনের মামলার প্রধান আসামি এবং বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাকিরুজ্জামান রাখাল গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। অথচ দীর্ঘদিন জনসম্মুখে প্রকাশ্যে গণসংযোগ শেষে গত বুধবার অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলোচিত এই জনপ্রতিনিধি।
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিদিন গণসংযোগ করে গত বুধবার দিনভর বিভিন্ন কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে ঘুরে ভোটের খোঁজখবর নেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তার ক্যাডার বাহিনীর হুমকির মুখে বিএনপিসহ অন্য তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচনের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন ডেকে সরে দাঁড়ান। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বুধবারের স্থগিত তিন কেন্দ্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা শাকিরুজ্জামান রাখাল নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আল আমীন। ২০১৬ সালের ২৮ মে ৫ম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে শাকিরুজ্জামান রাখাল তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক সিল মারার সময় দুই পক্ষের সহিংসতায় এক ছাত্রসহ চারজন খুন হন। ফলে নির্বাচন কমিশন তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দিয়েছিল। স্থগিত কেন্দ্রে গত বুধবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচিত এই চার খুনের ঘটনায় পাঁঁচটি মামলা হয়েছিল। মামলাগুলোতে প্রধান আসামি করা হয় শাকিরুজ্জামান রাখালকে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান, বিএনপি প্রার্থী সৈমুদ্দিন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আল আমীন অভিযোগ করে বলেন, শাকিরুজ্জামান রাখাল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। এ ছাড়াও তিনি একজন স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবনযাপন করছেন। অথচ পুলিশের খাতায় ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে তিনি রয়েছেন পলাতক। তাকে গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, উল্টো পুলিশ তাকে সালাম ঠুকছে।
এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে বলেন, শাকিরুজ্জামান রাখাল হত্যা মামলার আসামি কিন্তু তিনি নির্বাচনী কেন্দ্রে আমার চোখের সামনে পড়েননি। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, শাকিরুজ্জামান রাখাল এখনো জামিন নেননি তা তিনি জানতেন না। তবে অন্তত নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে আদালত থেকে তার জামিন নেওয়া উচিত ছিল বলে জানান।
পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন পিপিএম বলেন, দেওয়ানগঞ্জ থানার ওসি বিষয়টি তাকে আগে অবহিত করেনি। এ ব্যাপারে খুব শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।