• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
কোণঠাসা জঙ্গিরা একাট্টা

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

কোণঠাসা জঙ্গিরা একাট্টা

২ বার দেশে এলেও মেজর জিয়ার অবস্থান জানে না কেউ

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর ২০১৮

মেজর জিয়াকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাকে গ্রেফতার করতে না পারাই এ উদ্বেগের কারণ। অন্যদিকে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা ততই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাগিদ থাকা সত্ত্বেও ব্লগার হত্যার মাস্টারমাইন্ড আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। এই মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করা না গেলে নির্বাচনের সময় বড় ধরনের আঘাতের আশঙ্কা থেকে যাবে। ফলে মেজর জিয়াকে গ্রেফতার করতে না পারা পর্যন্ত অনেকের ঘুম হারাম। এ ছাড়া গত এক বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বোকা বানিয়ে সাভার ও চট্টগ্রামে ঘুরে গেছেন তিনি। এ বিষয়টি আরো ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের।

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম, কাউন্টার টেররিজমসহ কোনো ইউনিট বা গোয়েন্দা সংস্থা মেজর জিয়ার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। তিনি এ মুহূর্তে দেশে, না কি দেশের বাইরে আছেন এটাও তাদের অজানা। কারণ ধূর্ত মেজর জিয়া চোরাপথে পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করেন এবং সময় সুযোগমতো এ দেশে আসেন।

এ ব্যাপারে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটপ্রধান পুলিশের অ্যাডিশনাল আইজিপি শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মেজর জিয়া ছাড়া আমরা শীর্ষ সব জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি। বিশেষ করে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে পাঁচ শতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অভিযানে মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী, মেজর জাহিদ, মারজানসহ অর্ধশতাধিক জঙ্গি নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, মেজর জিয়া আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের বাইরে আছে। আমরা জিয়ার নেটওয়ার্কেও ঢুকে পড়েছিলাম। কিন্তু সে এতটাই ধূর্ত যে, নিজের নেটওয়ার্ক মেনটেইন না করে ঘাপটি মেরে আছে। আমরা অ্যাকটিভ আছি, মেজর জিয়া সরব হওয়ামাত্র গোয়েন্দা জালে ফেঁসে যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, হিযবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, জেএমবি ও নব্য জেএমবি এখন আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। তারা অনেকটা দুর্বল। নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে এখন তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা নিজেরা একাট্টা হয়েছে। এদের মূল টার্গেট আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাশকতা চালানো। সেই লক্ষ্যে তারা দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিচ্ছে। এখনো তারা ছদ্মবেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া জঙ্গিরা এখন দোকানদার-হকার, মিস্ত্রি, বাস-ট্রাকচালকের সহকারী সেজে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া ঠেকাতে বাইরের লোকদের দলে না টেনে নানা ছদ্মবেশ নিয়ে থাকা জঙ্গিরা নিজেদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেই এখন জঙ্গিবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে। গ্রেফতার জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা ও গোদাগাড়ী উপজেলার ছয়ঘাটি থেকে ছয় নারীসহ একই পরিবারের সাত জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে হাসান আলী নামে জেএমবির তালিকাভুক্ত এক সদস্য রয়েছে, যিনি গোদাগাড়ীর বেণীপুর ‘জঙ্গি’ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মো. খুরশীদ হোসেন বলেন, গ্রেফতার জঙ্গিরা বিভিন্ন সময় হামলার পরিকল্পনা করেছে বলে স্বীকার করেছে। এজন্য তারা জেএমবির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গোপনে বৈঠকও করেছে বলে জানিয়েছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও এদের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অনেক জঙ্গি মারা যাওয়ায় তাদের সক্ষমতা কমেছে। এখন তারা ছদ্মবেশে সদস্য সংগ্রহ, ফান্ড কালেকশন, অস্ত্রের প্রশিক্ষণের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে দেশে বড় ধরনের নাশকতা করাই হচ্ছে এদের টার্গেট। অবশ্য আমাদের একের পর অভিযানে এসব ভেস্তে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads