• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯
ছদ্মবেশে জঙ্গিদের নীরব অবস্থান

জঙ্গি

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

ছদ্মবেশে জঙ্গিদের নীরব অবস্থান

সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা চলছে

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর ২০১৮

সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সজাগ অবস্থানে কিছুটা নির্জীব জঙ্গিরা। দোকানদার-হকার, মিস্ত্রি, বাস-ট্রাকচালকের সহকারীসহ নানা কাজে ছদ্মবেশে তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে পার্বত্য এলাকা, উত্তরাঞ্চল ও দেশের বিভিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলে। ছদ্মবেশে জঙ্গিদের অবস্থানের তথ্য আছে গোয়েন্দার কাছেও। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি তাদের মূল পরিকল্পনার অংশ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। এসব জঙ্গিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গ্রেফতার ঠেকাতে বাইরের লোকদের এ মুহূর্তে দলে টানার চেষ্টা করছে না জঙ্গিরা। তারা জঙ্গিবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছে নিজেদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের। তথ্য মতে, পার্বত্য বিভিন্ন এলাকায় সাধারণের ছদ্মবেশে থাকছে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা। অনেকে লজিং থেকে এবং পাহাড়ি মেয়ে বিয়ে করে দিন পার করছে। সেখানে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে থাকছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। নির্বিঘ্নে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাসহ নাশকতার ছক আঁটছে। সীমাবদ্ধতার কারণে গোয়েন্দারা এদের চিহ্নিত করতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিরা একাট্টা হচ্ছে ছদ্মবেশে। রাজশাহী অঞ্চলের নেতৃত্বে আছে জঙ্গি লোকমান হাকিম। জেএমবির এই নেতা সম্প্রতি রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে দলীয় সভা আয়োজন, উগ্রবাদী বই বিতরণ, এয়ানতের টাকা আদায়, জিহাদি দাওয়াত ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। এই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী জেলার পবা এলাকার জেএমবি নেতা মোজাম্মেল হক ওরফে মোজার বাড়িতে দলীয় সভায় অংশগ্রহণ করে। ওই সভা থেকে মোজাম্মেলসহ সংগঠনের ১২ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও মূল হোতা লোকমান হাকিম ও আরো কয়েকজন পালিয়ে যায়। এর পর থেকে লোকমান হাকিম টিউবওয়েলের মিস্ত্রির ছদ্মবেশে সহযোগী সদস্যদের নিয়ে সংগঠনের কাজে বিভিন্ন এলাকায় আসা-যাওয়া শুরু করে। ছদ্মবেশে লোকমান হাকিমের চলাফেরার এ তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে। আরো অর্ধশত জঙ্গি ছদ্মবেশে চলাফেরা করছে বিভিন্ন অঞ্চলে।

গোয়েন্দারা জঙ্গি নেটওয়ার্কে ঢোকার চেষ্টা করছে বলে তাদের দাবি। জঙ্গি এই নেটওয়ার্ক ‘আইডেন্টিফাই’ এবং তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা এ মূহূর্তে তাদের নেই, এটা আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি। তিনি আরো বলেন, আমাদের তৎপরতায় জঙ্গিরা নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে নির্মূল হয়নি। তারা বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়েছে এ তথ্য আমরা পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করার। জঙ্গিদের একটা অংশ ছদ্মবেশে তৎপর। এদের একটা অংশ নিজের পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধবদের জঙ্গি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, পুলিশি অভিযানে কোণঠাসা জঙ্গিরা দুর্গম চলাঞ্চলে নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছে। পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে পুলিশি নজরদারি কম থাকায় এ সুযোগ নিচ্ছে তারা। র্যাব ও পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সম্প্রতি অভিযান পরিচালনা করে দুই জঙ্গি আস্তানা ইতোমধ্যে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।

তথ্য বলছে, কোনো কোনো এলাকায় জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরে ছিনতাই-ডাকাতিও করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুনাম নষ্ট করা। রাজধানী এবং তার উপকণ্ঠে সাভার, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, টঙ্গী, সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাচেলর স্টুডেন্ট হিসেবে ভাড়া থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে।

গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জিয়া রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জঙ্গিরা ছদ্মবেশে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আসক্ত অনেক তরুণ এখনো জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে বসে থাকলে বা হেলাফেলা করলে হবে না। এদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। এরা ছদ্মবেশে আছে। সুযোগ বুঝে যেকোনো সময় ছোবল দিতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads