• শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪২৯
দাপিয়ে বেড়ানো ‘নকল র‌্যাব’ ধরা

আটকৃত ভুয়া র‌্যাবের মাইক্রোবাস

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

ধামরাইয়ে ৮ ‘ভুয়া’ ডিবি পুলিশ গ্রেফতার

দাপিয়ে বেড়ানো ‘নকল র‌্যাব’ ধরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০১৮

র্যাব পরিচয়ে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতাসহ ৭ সক্রিয় সদস্যকে অস্ত্র, গুলি, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও র্যাব স্টিকারযুক্ত মাইক্রোবাসসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর কাওলা থেকে গত রোববার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে গতকাল সোমবার সকালে কারওয়ান বাজারস্থ র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেফতাররা হলো- কাশেম ওরফে জীবন (৫৮), খলিল (৪০), জাকির হোসেন সুমন (২৭), বিল্লাল হোসেন আসলাম (৩২), আবদুল মন্নান (৫০), সোহাগ (২৭) ও আরিফ (২৮)। তারা অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য, র্যাব সদস্যের মতো বেশভূষা ধারণ করে ও র্যাব পরিচয় দিয়ে গত দুই মাস ধরে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ নানাবিধ অপরাধ করে আসছে। নিজেদেরকে র্যাব সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে তারা র্যাবের জ্যাকেটের মতোই জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ, আইডি কার্ড ব্যবহার ও অস্ত্র বহন করে। র্যাবের স্টিকার তৈরি করে বিভিন্ন মানানসই গাড়িও ব্যবহার করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার গভীর রাতে রাজধানীর কাওলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করে র্যাব-১। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ২ রাউন্ড অ্যামোনেশন, ২টি হ্যান্ডকাফ, ২টি র্যাব জ্যাকেট, একটি র্যাব বোর্ড, ২টি সিগন্যাল লাইট, ৬টি বড় লাঠি, দড়ি, একটি ওয়াকিটকি সেট, ৪টি চোখ বাঁধার কালো কাপড়, ১৪টি মোবাইল ফোনসেট, ৪টি মানিব্যাগ, একটি ওয়্যারলেস, একটি ম্যাগজিন, নগদ ২৮ হাজার টাকা এবং একটি কালো গ্লাসের র্যাব স্টিকার যুক্ত হায়েস মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই অপরাধী চক্রের মূল হোতা কাশেম ওরফে জীবন। এই সংঘবদ্ধ চক্রের স্থায়ী সদস্য ১০ থেকে ১১ জন। সাম্প্রতিক সময়ে চক্রটি ব্যাংকের গ্রাহকদের অপহরণ ও অর্থ ছিনিয়ে  নেওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে। প্রথমত দলের ১ বা ২ জন সাধারণ ছদ্মবেশে ব্যাংকের বাইরে, ২ বা ৩ জন গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে এবং মূল দলটি মাইক্রোবাসযোগে সুবিধাজনক স্থানে অপেক্ষা করতে থাকে। এরপর সুযোগ বুঝে বেশি পরিমাণ টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহককে অপহরণ করে। এরপর তারা গাড়ির ভেতরে ভিকটিমকে চোখমুখ বেঁধে চলন্ত মাইক্রোবাসে নির্যাতন করে সমস্ত টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ভিকটিমকে রাস্তায় ফেলে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপরাধী চক্রটি গত দুই মাসে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৩ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড  থেকে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আশুলিয়া সাভার ইপিজেড এলাকা থেকে ২ লাখ, কুমিল্লার চান্দিনা কাঁচাবাজার থেকে একজনকে অপহরণ করে ১ লাখ, ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানাধীন আটিপাড়া বাজার থেকে ৭ লাখ, নরসিংদীর শিবপুর বাজার এলাকা থেকে ১০ হাজার, মাদারীপুর শিবচর বাজার এলাকা থেকে ২ লাখ, মানিকগঞ্জ পাটুরিয়া শিবালয় থানা এলাকা  থেকে ১ লাখ, টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৩ লাখ, সিরাজগঞ্জ জেলার নিমতলা বাজার জোড়াব্রিজ এলাকা থেকে ২ লাখ, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে ২ লাখ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম মিয়ার বাজার থেকে ৩ লাখ ও কুমিল্লার চান্দিনা থানাধীন সেনানিবাস এলাকা থেকে ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা অপহূতদের কাছ থেকে লুট করেছে।    

ধামরাইয়ে ৮ ‘ভুয়া’ ডিবি পুলিশ গ্রেফতার : আমাদের ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক ডিশ লাইন ব্যবসায়ীর সোয়া ৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আটজন ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ধামরাই থানা পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোররাতে ধামরাই ও সাভারের নবীনগর এবং বিশমাইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে এক জোড়া হ্যান্ডকাফ, একটি খেলনা পিস্তল, ডিবি পুলিশের দুই সেট পোশাক, নকল চুল, একটি ওয়াকিটকি, ছিনতাই করা ৪ হাজার ৭০০ টাকা, দুটি হায়েস মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাইদুর রহমান গতকাল সোমবার দুপুরে ধামরাই থানা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ধামরাইয়ের হিরানদী কুল্লা গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে ডিশ লাইন ব্যবসায়ী সাব্বির আলম গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ধামরাই পৌর এলাকার একটি ব্যাংক থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণ করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয় অপরাধীরা। এ ঘটনায় ধামরাই থানায় মামলা হলে ওসি দীপক চন্দ্র সাহা ও এসআই সেকেন্দার আলী অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করেন। গ্রেফতাররা হলো- বরগুনা সদর থানার নাসির উদ্দিনের ছেলে জসিম, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদর থানার জামাল উদ্দিনের ছেলে আলমগীর হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার মন্টু শেখের ছেলে আলমগীর শেখ, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি থানার আবদুল আজিজের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, ঝালকাঠির নলসিটি থানার সোবাহান খানের ছেলে মাসুম খান, জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানার ফুরকাদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম ও কুমিল্লার দেবীদ্বার থানার কাজিমুদ্দিনের ছেলে মোস্তফা মিয়া।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads