• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪২৯
পুলিশে প্রযুক্তি সহায়তা বাড়াতে নানা উদ্যোগ

পুলিশ বাহিনী

সংলক্ষিত ছবি

অপরাধ

পুলিশে প্রযুক্তি সহায়তা বাড়াতে নানা উদ্যোগ

# অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে # আন্ডারওয়ার্ল্ডে নেই টপ টেররদের দাপাদাপি # বাড়ছে ডিজিটাল ক্রাইম # ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু হচ্ছে ই-পুলিশ সিস্টেম

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

এখন আর সেই টপ টেররদের যুগ নেই। নেই আন্ডারওয়ার্ল্ডে আধিপত্য বিস্তারের দৌড়ঝাঁপ। বদলে যাচ্ছে অপরাধের ধরন। পাল্লা দিয়ে বদলে ফেলা হচ্ছে পুলিশকেও। পুলিশ বাহিনী এখন অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিসম্পন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি বাহিনী। পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এ তথ্য।

তারা আরো জানিয়েছেন, ডিজিটাল ক্রাইম বাড়ছে। এটি সামাল দিতে সাইবার ক্রাইম সেন্টার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশপাশি ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে অনলাইনভিত্তিক সেবামূলক কার্যক্রম। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ৯৯৯-এ কল দিয়ে যেকোনো তথ্য ও আইনগত সহায়তা নিতে পারছে দেশের মানুষ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রোধ ও মনিটরিং করতে পুলিশ সদর দফতরে এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে যুক্ত করা হয়েছে সাইবার ইউনিট। সাইবার ইউনিট সদস্যরা ডিজিটাল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা (সিআইডি) ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে এক ধাপ এগিয়ে গেছে।

সিআইডি পুলিশের ডিআইজি লুৎফর রহমান মণ্ডল আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সিআইডি পুলিশের একের পর এক অভিযানে প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে গেছে। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ডসহ কমপক্ষে ২০ জনকে বিভিন্ন সময় সিআইডি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ফলে তাদের নেটওয়ার্কে ধস নেমেছে। এদিকে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ই-পুলিশ সিস্টেম চালু করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। আগামী জুন মাস থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ই-সেবা সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে হোস্টিং করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ডাটা স্টোরেজের জন্যও তা ব্যবহার করা যাবে। এতে ডাটা স্টোরেজে অধিকতর দক্ষতা অর্জন এবং তা নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশের সঙ্গে তাল মেলাতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ একটি ক্রমবর্ধমান মোবাইল, অনলাইন এবং সাইবার পরিবেশে প্রবেশ করেছে এবং এসব ক্রমবর্ধমান তথ্য নিরাপদভাবে পরিচালনা এবং সংরক্ষণ করা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যমান ডাটা সেন্টারে জরুরি পুলিশি সেবা দেওয়ার জন্য পুলিশ ওয়েবসাইটসহ ৩৬টি অ্যাপ্লিকেশন চালু আছে। এতে কোনো অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা সিস্টেম নেই এবং সিঙ্গেল ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম থাকায় অনেক সময় সার্ভার ডাউন থাকলে অনলাইন পুলিশি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টার শুধু সাধারণ স্টোরেজ সিস্টেম হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এবং সাইবার অ্যাটাক প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের কাজে ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান ডাটা সেন্টারের ধারণক্ষমতা এবং ডাটা নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্যই ই-পুলিশ সিস্টেমের উদ্যোগ।

সূত্র আরো জানায়, বিশ্বব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো সাইবার ক্রাইম। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, ক্রাইম প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস ও সিসিটিভি নজরদারি প্রভৃতি ই-পুলিশিং সেবা দেওয়া এবং সেবাগুলোর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি বাংলাদেশ পুলিশের আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০২০-এর বিষয়গুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইসিটি বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য এবং অ্যাপ্লিকেশন নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পুলিশি অ্যাপ্লিকেশনে সাইবার হামলা কমানোসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের চাহিদামাফিক আইটি উদ্যোগের জন্য ডিজিটাল কম্পিউটিং এবং স্টোরেজ সুবিধা দিতে ই-পুলিশ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যাতে পুলিশ বাহিনী আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে কারো থেকে পিছিয়ে না থাকে।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাহিনী হিসেবে দেখতে চায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পুলিশের পেছনে ব্যয় করাটাকে ইনভেস্ট মনে করেন। ফলে পুলিশ বাহিনীর ইত্যকার সমস্যা সমাধানে তিনি গত ১০ বছর ধরে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। ফলে পুলিশ আজ একটা জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের ফলে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে দেশের মানুষ ভালো থাকে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে। অর্থনৈতিভাবেও দেশ এগিয়ে যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads