• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
হত্যার নিশানায় ছিলেন দৈনিকের সম্পাদক

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাব

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

হত্যার নিশানায় ছিলেন দৈনিকের সম্পাদক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী উত্তরায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক জঙ্গিদের টার্গেট ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে হত্যা করা। একই সঙ্গে কারাগারে হামলা চালিয়ে এবিটির প্রধান নেতা জসিম উদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। এবিটি একটি সেল দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গসহ কথিত ইসলামবিদ্বেষীঅনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের চিহ্নিত করে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের ছদ্মবেশেও তাদের ওপর নজরদারিও করা হতো।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে উত্তরায় অভিযান চালিয়ে এবিটির চার সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-১। তারা হলো, শাহরিয়ার নাফিস ওরফে আম্মার হোসেন (২০), রবিউল ইসলাম ওরফে নূরুল ইসলাম (২৪), রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪) এবং আবদুল মালেক (৩১)। এ সময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

ংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২৮ জানুয়ারি আশুলিয়া এলাকা থেকে এবিটির সদস্য আবদুস সোবহান ওরফে হাবিবকে গ্রেফতার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার র্যাব-১ এই চারজনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা এবিটির সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, এবিটি  অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগাররা টার্গেট অ্যান্ড কিলিং’-এর ভিকটিম হয়েছে। ছদ্মবেশ নিয়ে যুক্ত হয়ে, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে একটি প্রথম শ্রেণির জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় গত জুলাইয়ে প্রকাশিত বিবাহ সংক্রান্ত হাদিস সম্পর্কে কটূক্তিউল্লেখ করে ওই সম্পাদককে হত্যার পরিকল্পনা করে। এবিটিকে সক্রিয়, সদস্য সংগ্রহের জন্য তারা চেষ্টা করে আসছিল। পটুয়াখালীর একটি স্থান নির্ধারণ করেছিল প্রশিক্ষণের জন্য। এজন্য অস্ত্রের অর্ডারও দিয়েছিল। এসব বাস্তবায়নের আগেই তাদের আটক করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, আটক শাহরিয়ার সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদরাসায় অধ্যয়ন করেছিল। এরপর হাইস্কুলে অধ্যয়ন শুরু করে সে। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমানের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দেয় শাহরিয়া। আমানের নির্দেশনায় সে ৪-৫টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালাত এবং জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করত। এভাবে সে ৭-৮ জনকে এবিটির সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। শাহরিয়ার এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর নজরদারি করা শুরু করে।

তিনি বলেন, শাহরিয়ার ছদ্মবেশে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাস্তিক গ্রুপ নামে একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে ঢুকে পড়ে। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই মিশনে শাহরিয়ারসহ সংগঠনের আরো দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ধারালো অস্ত্রসহ ঢাকা থেকে একজন এবং বরগুনা থেকে একজন বগুড়া যায়। এরপর তারা ওই অ্যাক্টিভিস্ট সদস্যকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে বলে। কিন্তু সে দেখা না করায় তাদের মিশন ব্যর্থ হয়ে যায়।

আটক রাসেল সম্পর্কে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সালে সে এসএসসি পাস করে একটি গার্মেন্টে চাকরি নেয়। ফেসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখে অন্যদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি ফেসবুকে মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপে নজরদারির নিয়ন্ত্রক আমানের মাধ্যমে এবিটিতে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ হয়। সে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে দাখিল পাস করে। অতঃপর সে বগুড়া পলিটেকনিক্যালে ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৫ সালে শেষ করে। ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে রবিউল। আবদুল মালেক পেশায় একজন প্রাইভেট গাড়িচালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে ওই গ্রুপে যোগ দেয়।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এবিটির সদস্যরা জানিয়েছে, গোপনে তারা সংগঠনকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা হচ্ছে সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত না করতে পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে বলে জানায়। এজন্য তারা অর্থ সংগ্রহ করেছে। তারই একাংশ গ্রেফতারকৃত রাসেলের কাছে জমা ছিল বলে জানা যায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads