• শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪২৯
নেত্রকোনায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আটক ৩২ জনের ১৩ জনই শিক্ষক

ছবি: বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

নেত্রকোনায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আটক ৩২ জনের ১৩ জনই শিক্ষক

  • নেত্রকোনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৯ জুন ২০১৯

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের কাছে মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহের সময় আটক ৩২ জনকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এর আগে শুক্রবার রাতে কেন্দুয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। কেন্দুয়া থানার এসআই আবুল বাশার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও পাবলিক পরীক্ষা আইন-১৯৮০ এর দু’টি পৃথক ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।

আটক ৩২ জনের মধ্যে ১২ জন নারী। এদের মধ্যে আটজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। অন্যদিকে পুরুষ ২০ জনের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। এছাড়া দু’জন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের স্বজন।

পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দুয়ার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ওরফে ছোটন এই চক্রের মূল হোতা।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এ চক্রটি আরও আগে থেকে এ ধরনের অপরাধে জড়িত। দু’টি দলে ভাগ হয়ে এরা এ ধরনের অপকর্ম করে। একদল শিক্ষক লিখিত পরীক্ষায় বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারা পরীক্ষার হলে প্রশ্ন সরবরাহের দু-তিন মিনিটের মধ্যে মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে দ্বিতীয় দলের কাছে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেন। এরপর দ্বিতীয় দল মোবাইলসহ ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহ করেন। পরীক্ষার হলে কর্মরত শিক্ষকরা তখন পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ওএমআর শিট পূরণ করতে পারেÑ সে ব্যাপারে সহযোগিতা করেন। এ চক্রে ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে পারদর্শী রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আবু সাইদ এবং লুৎফর রহমানকে মূলত এ কারণেই এ চক্রে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। চক্রটি লিখিত পরীক্ষায় ৮০ নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ৭০-৭৫ নম্বর পাইয়ে দেয়ার শর্তে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন।

গত শুক্রবারও তারা নেত্রকোনা সদরের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের জালিয়াতি করছিল। তখন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কেন্দুয়া পৌর এলাকার ছয়আনী গ্রামের শিল্পপতি মনিরুজ্জামান শামীমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চক্রটির ৩২ সদস্যকে গ্রেফতার করে স্থানীয় থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বেশকিছু ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া শামীমের ভাই শহিদুজ্জামান ভূঁইয়া মিন্টু এ চক্রের অন্যতম সহযোগী বলে ধারণা করছে পুলিশ। 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া আরও জানান, এ চক্রে আরও বেশকিছু সদস্য জড়িত। এদেরকেও চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান, ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম এবং মামলার আইও এসআই আবুল বাশার উপস্থিত ছিলেন।

আটক ৩২ জন হলেন-আব্দুল মান্নান ওরফে ছোটন, আজহারুল ইসলাম, আবুল বাশার, শহিদুজ্জামান ভূঁইয়া ওরফে মিন্টু, বিকাশ দে, সাইফুল ইসলাম, আবু সাইদ, লুৎফর রহমান, রাজন, লোকমান হোসেন, জুয়েল, সাকি, মজিবুর রহমান, নিলয় মাহমুদ, নাজমুল ইসলাম, বিলাশ সরকার, চয়ন দত্ত (সরকারি কর্মচারী), শরিফ, শাহরিয়ার ইসলাম, হাওয়া বেগম, তুহিন আক্তার, মরিয়ম, স্মৃতি, ডলি, রিপা, তাহমিনা, নিপা মোনালিসা, লাকি আক্তার, মনি আক্তার, তাসলিমা, নাজনীন সুলতানা ও পিয়াস।

এদের বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া, গৌরীপুর, মদন ও আটপাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads