• মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জৈষ্ঠ ১৪২৮
আমেরিকা প্রবাসী পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ!

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

আমেরিকা প্রবাসী পরিচয়ে প্রতারণার ফাঁদ!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০১৯

আলতাফ হোসেন (৪৮) নিজেকে আমেরিকা প্রবাসী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ফাঁদে ফেলেছেন অসংখ্য মানুষকে। অথচ তিনি কখনোই বিদেশে যাননি। তবে আমেরিকায় অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে চাকরি দেওয়ার নামে দেশজুড়ে ছড়ানো ছিল তার প্রতারণার ফাঁদ। গত কয়েক বছরে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বুধবার রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকা থেকে আলতাফের সহযোগী শরীফুল ইসলামসহ (৫৮) আলতাফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গতকাল বৃহম্পতিবার মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. কামরুজ্জামান।

এসএসপি কামরুজ্জামান বলেন, আলতাফ আমেরিকা যেতে আগ্রহীদের সঙ্গে সাধারণত দুপুরে দেখা করতেন। এ সময় ঘুমানোর ভান ধরে বলতেন, আমেরিকায় এখন রাত, তাই বাংলাদেশে এসে তার ম্যাচিং হচ্ছে না, এ দেশের আবহাওয়া তার সহ্য হচ্ছে না। রেস্টুরেন্টে গিয়ে ১০ হাজার টাকা বিল হলে হোটেল বয়কে আরো ১০ হাজার টাকা টিপস দিতেন। ফলে সাধারণরা আকৃষ্ট হতেন সহজেই।

তিনি আরো বলেন, এ চক্রে আলতাফের অন্যতম সহযোগী শরীফুল মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকদের প্রলুব্ধ করে আলতাফের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতেন। এরপর অবস্থা বুঝে ৩-৫ লাখ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকাও আদায় করতেন তারা। এ চক্রে আমরা আরো চারজনের নাম পেয়েছি। তবে অন্তত ১০ জন এ চক্রে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করছি। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে চক্রের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

এসএসপি কামরুজ্জামান বলেন, আলতাফ হোসেন নিজের মায়ের নামে গাজীপুরে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বৃদ্ধাশ্রম করছেন। সেখানে বিনিয়োগ ও মালামাল সাপ্লাইয়ের কথা বলে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। দুজন গ্রেপ্তারের খবর শুনেই অন্তত ২০-৩০ জন ভুক্তভোগী আমাদের কাছে এসেছেন। আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের সহায়তা করা হবে।

সিআইডি জানায়, প্রতারণার প্রথম ধাপে আমেরিকা যেতে কোনো আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে আলতাফ দেখা করতেন দামি হোটেল বা রেস্টুরেন্টে। চলাচল করতেন প্রাডো কিংবা এলিয়ন গাড়িতে। আমেরিকার রাজনৈতিক-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও বলতেন অবলীলায়।

আমেরিকায় নিজস্ব বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা, নিজের কথিত প্রতিষ্ঠান ‘ভেলা অ্যাসোসিয়েটসে’ চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন আলতাফ হোসেন। তিনি কোনো ব্র্যান্ডের জুতার দোকানে ৪০-৫০ জোড়া জুতার প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকার অর্ডার করতেন। ফলে দোকানের কর্মীরাও তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। বিভিন্ন দোকানের কর্মীরাও প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি শামীম বাসার নামে একজন ভুক্তভোগী কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।

আনোয়ার হোসেন নামে একজন ভুক্তভোগী জানান, তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। গত বছর সেপ্টেম্বরে শরীফুলের মাধ্যমে আলতাফের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। একপর্যায়ে অক্টোবরেই আমেরিকা নিয়ে যাবেন বলে দ্রুত জরুরি কাগজপত্র ও ছবি জমা নেন। মেডিকেল টেস্ট করানোর পর অক্টোবরের ৩ তারিখে তিনি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেন। এরপর থেকেই শরীফুল ও আলতাফের নম্বর বন্ধ পাচ্ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads