• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
গলায় রশি পেঁচিয়ে লাশ রান্নাঘরে নেয় হারুন

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যা

গলায় রশি পেঁচিয়ে লাশ রান্নাঘরে নেয় হারুন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৯

রাজধানীর ওয়ারীতে শিশু সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আটক হারুন-উর-রশিদ ওরফে হারুন (২৬) গত দুই মাস ধরে তাদের বাসার ওপরে অষ্টম তলাতেই থাকত। গত শুক্রবার খেলার সঙ্গীকে না পেয়ে সায়মা যখন বাসায় ফিরছিল, তখনই লিফটে দেখা হয় হারুনের সঙ্গে। সে শিশুটিকে ছাদ দেখানোর কথা বলে নিয়ে যায় নয় তলার খালি ফ্ল্যাটে। সেখানেই ধর্ষণ করে তাকে। শুধু ধর্ষণই নয়, ছোট্ট সায়মার ঠোঁটে-মুখে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে। অমানুষিক এই নির্যাতনে একসময় ছোট্ট দেহখানি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পড়ে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানেই সায়মার মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় পাষণ্ড হারুন। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন এভাবেই সাত বছরের সায়মা হত্যার বর্ণনা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবদুুল বাতেন বলেন, রোববার সকালে কুমিল্লার তিতাসের ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে অভিযুক্ত হারুনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তার হারুন ওয়ারীর ওই ভবনের ৮ম তলার বাসিন্দা পারভেজের খালাতো ভাই। আবদুস সালামের পরিবারের সঙ্গে পারভেজের পরিবারের ভালো সখ্য ছিল। পারভেজের বাসায় থেকে গত দুই মাস ধরে তার রঙের দোকানে কাজ করে আসছিল হারুন। তাকে গত এক জুলাই থেকে পারভেজ তার দোকানে কাজ করতে না করে দিয়েছিলেন। কারণ প্রতি সপ্তাহে কাউকে না বলে সে বাড়ি চলে যেত। তারপরও খালাতো ভাই হওয়ায় কয়েকদিন ওই বাসায় ছিল। গত শুক্রবার সে নির্মম ঘটনা ঘটিয়ে সে বাসা থেকে পালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় অন্য কোনো কারণ বা কেউ জড়িত ছিল না। হারুন এটা একাই ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

বাতেন বলেন, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হারুন ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এখন আসামি হারুনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

এদিকে ওয়ারি থানার ওসি আজিজুর রহমান গতকাল রোববার সন্ধ্যায় টেলিফোনে বাংলাদেশের খবরকে জানান, আজ সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাইতে আসামিকে আদালতে পাঠানো হতে পারে। যদি সে ১৬৪-এ স্বীকারোক্তি দেয় তাহলে রিমান্ডের প্রয়োজন হবে না।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সামিয়া হত্যার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে পেতে ওই বাসার সব নারী-পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। পরে হারুনের নাম জানা যায়।

অভিযুক্ত হারুনকে আদালতে নেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মিডিয়া সেন্টারের সামনে দিয়ে তাকে হাঁটিয়ে ডিএমপির গাড়িতে তুলতে নিয়ে যাচ্ছিল ডিবি পুলিশের একটি দল। এ সময় সাধারণ জনতা হারুনকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ কেউ কেউ তাকে মারতে উদ্যত হয়। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।

ডিবি কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা আট তলায় যায় ওই ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের এক বাচ্চার সঙ্গে খেলা করতে। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী তাকে জানায়, তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। সে শিশুটিকে ছাদ দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে লিফট থেকে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণের চেষ্টা করে সায়মাকে। এ সময় সায়মা চিৎকারের চেষ্টা করলে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে হারুন। এক পর্যায়ে শিশুটি নিস্তেজ হয়ে গেলে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় নয় তলার রান্নাঘরে। সেখানে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় পালিয়ে যায় হারুন।

আবদুল বাতেন আরো বলেন, হারুনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববারই (গতকাল) আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে।

সায়মার বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সায়মা ছিল সবার ছোট। ওয়ারী সিলভারডেল স্কুলের শিশু শ্রেণিতে পড়ত সে। নৃশংসভাবে সায়মাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে তার সহপাঠীরা। সকালে সিলভারডেল স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে তারা। শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অভিভাবক ও শিক্ষকরা বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় হত্যার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়। এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে সে ব্যাপারে এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা। 

গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর ওয়ারীতে বহুতল একটি ভবনের ৯ তলার খালি ফ্ল্যাট থেকে শিশু সায়মার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads