• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
ছয় মাসের মধ্যে মেয়ে হত্যাকারীর ফাঁসি চান বাবা

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যা

ছয় মাসের মধ্যে মেয়ে হত্যাকারীর ফাঁসি চান বাবা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ জুলাই ২০১৯

মাত্র দুদিন আগেও সাত বছরের শিশু সায়মাকে ঘিরে আনন্দে দিন কাটত বাবা-মায়ের। সারাক্ষণ হাসি-খেলায় মাতিয়ে রাখত পুরো পরিবারকে। অথচ আদরের সন্তান সায়মার পোশাক, বই ও ছবি এখন বাবা-মায়ের কাছে শুধুই স্মৃতি। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা সানজিদা আক্তার। মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে সামান্য দানাপানিও মুখে দেননি তিনি। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। গতকাল রোববার ওয়ারীতে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার সায়মার বাসায় গিয়ে এ রকম চিত্র পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তানহারা বাবা আবদুস সালাম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি ছয় মাসের মধ্যে হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’ খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের সন্তান আছে তারা এসব কুরুচিপূর্ণ ব্যক্তির কাছ থেকে কীভাবে সন্তানদের দূরে রাখবেন, বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আমি আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারিনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মেয়েটা আমার স্ত্রীকে বলে ১০ মিনিটের জন্য বাইরে গেল। এরপর সে আর ফিরল না। তাকে নৃশংসভাবে খুন হতে হলো। গত দুদিন ধরে আমি একফোঁটা পানিও খেতে পারিনি। ঘরে গেলে মেয়ের কাপড়-চোপড়, ছবি দেখে আর ঠিক থাকতে পারি না। আমার পুরো পরিবারটা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

আবদুস সালাম বলেন, আমি হয়তো আমার কন্যাকে রক্ষা করতে পারিনি; এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু আমি চাই না, আর কোনো মা-বাবার বুক এভাবে খালি হোক। এ রকম নির্মম নির্যাতনে কোনো সন্তানের জীবন যাক, সেটা আমি চাই না।

আবদুস সালাম বলেন, আমার মেয়ে হত্যার খবর যেভাবে দেশবাসী আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারল, তা আশা করিনি। কোনো পরিবারই তা প্রত্যাশা করে না। আপনাদের নিউজের কারণে মেয়ের হত্যাকারী দ্রুতই গ্রেপ্তার হয়েছে।

সায়মার বাবা বলেন, যাদের সন্তান আছে, ঘরে মেয়ে আছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই— এ রকম কুরুচিপূর্ণ ও পাশবিক ঘটনার শিকার যাতে না হয়, সে জন্য ছেলেমেয়ের হেফাজত করবেন, রক্ষা করবেন।

এ ধরনের কোনো ঘটনা যেন ধামাচাপা পড়ে না যায়, সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। রাত ৯টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নয়তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটের ভেতরে শিশু সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

সায়মার ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। সোহেল মাহমুদ আরো বলেন, ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ দেখা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ঘটনার পর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে হারুন নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে শিশু সায়মাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, সায়মার পরিবার ওয়ারীর যে ভবনের ষষ্ঠ তলায় থাকত সে ভবনেরই অষ্টম তলায় খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় থেকে তার রঙের দোকানে কাজ করত হারুন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads