• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
ঈদকে ঘিরে সক্রিয় মৌসুমি অপরাধীরা

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

ঈদকে ঘিরে সক্রিয় মৌসুমি অপরাধীরা

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৯

আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে সক্রিয় মৌসুমি অপরাধীরা। প্রতিদিনই সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে এসব অপরাধীর কার্যক্রম। কখনো সাধারণ মানুষকে অচেতন করে, আবার কখনো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এরা লুটে নিচ্ছে টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান সম্পদ। শুধু টাকা-পয়সা বা মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে এরা ক্ষান্ত হচ্ছে না, সামান্য বাধা পেলেই কারো প্রাণ নিতেও দ্বিধা করছে না। অজ্ঞানপার্টি-ছিনতাইকারীর পাশাপাশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা। ঈদকে ঘিরে এসব ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে বিপুল পরিমাণ জাল টাকার মজুত। এসব অপরাধীকে ধরতে মাঠেও নেমেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পোশাকধারী বাহিনীর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও কাজ করছেন তারা। জুলাই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত শতাধিক ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টির সদস্য ও জাল টাকার ব্যবসায়ী।  

ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান জানান, প্রতি বছরই ঈদকে ঘিরে মৌসুমি অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে অন্য বছরের তুলনায় খুবই কম অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অপরাধ করার আগেই অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে। তিনি আরো বলেন, ঈদকে ঘিরে প্রতি বছর জাল টাকার ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে। তবে এবার বেশ কয়েকটি গ্রুপকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে তাদের চেইন অব কমান্ড ভেযে পড়েছে। এখন অনেকটাই কোণঠাসা জালনোট ব্যবসায়ীরা। তাদের ধরতে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান জানান, মৌসুমি অপরাধীদের ধরতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। রাস্তাঘাটে চেকপোস্টের পাশাপাশি টহল জোরদার করা হয়েছে। জনসমাগত স্থান ও মার্কেটগুলোতে সাদা পোশাকে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। রাতে রাস্তায় কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া জামিনে ছাড়া পাওয়া ছিনতাইকার-অজ্ঞানপার্টির সদস্যদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  অপরাধ সংঘটিত করার আগেই তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে।

গত ২৫ জুলাই বংশালের তাঁতীবাজার মোড়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শুভ নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত শুভর প্রতিবেশী আ. রহিম জানান, শুভ জুয়েল রেক্সিন দোকান কর্মচারী। তাঁতীবাজার এলাহী ট্রান্সপোর্টে মাল দিয়ে ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। ছিনতাইকারীরা তার মুঠোফোন নিয়ে গিয়ে পেটে-পিঠে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রাত ১০টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

গত ১৩ জুলাই চলন্ত ট্রেনের ছাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. জাকিউল (২২) নামে এক যুবক আহত হয়েছেন। ওই দিন রাতে জামালপুর থেকে কমিউটার ট্রেনে ঢাকা কমলাপুর স্টেশনে আসার সময় বিমানবন্দর রেলস্টেশন পার হওয়ার পর রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনের আগে ঘটনাটি ঘটে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত জাকিউল জানান, দুজন ছিনতাইকারী তার মুঠোফোনসহ নগদ সাত হাজার টাকা নিয়ে যায় ও বাম ঊরুতে কয়েকটি ছুরিকাঘাত করে। কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় আসার পথে বিমানবন্দর ও তেজগাঁও স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় দুই ছিনতাইকারী এই ঘটনাটি ঘটায়।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে অনুপ আদিত্য নামে এক ছাত্র গুরুতর আহত হন। ভুক্তভোগী অনুপ জানান, বিকাশে টাকা তুলে পলাশী থেকে জগন্নাথ হলে ফিরছিলেন। ফেরার পথে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফুলার রোডের সংযোগস্থলে স্বাধীনতার সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ৪ যুবক তার পথরোধ করে সঙ্গে থাকা সবকিছু দিয়ে দিতে বলে। এ সময় অনুপ ভয়ে দৌড়ে পালাতে চাইলে ছিনতাইকারীরা অনুপকে ছুরিকাঘাত করে ও পলাশীর দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। অনুপ আরো জানান, ছুরিকাঘাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়েছিলেন। সেখান থেকে উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতের ফলে শরীরের ৩টি স্থানে ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। 

গত ১৫ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় জাল রুপি তৈরির সময় তিন জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরা হলো- রফিকুল ইসলাম খসরু, মো. আবদুর রহিম ও জনি ডি কস্তা। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাড়ে ১৯ লাখ জাল রুপি ও প্রায় এক কোটি রুপি তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, আসন্ন কোরবানির পশুর হাটকে টার্গেট করেছিল এই চক্রটি। কোরবানির ঈদে ভারত থেকে আসা গরু কেনাবেচার হাটে এই মুদ্রা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকায় একটি চালান পাঠিয়েছিল তারা। কিন্তু যথেষ্ট নিখুঁত না হওয়ায় চালানটি ফেরত আসে। এখন চেষ্টা ছিল আরো নিখুঁতভাবে মুদ্রা তৈরির। 

এর আগে গত ৯ জুলাই রামপুরার উলন রোডের একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করে ৩৭ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল বাংলাদেশি টাকা ও টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।

গত ৫ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরা হলো— শাহিদ মোল্লা (৩০), বিল্লাল হোসেন (৪৫), লিটন (২৮), ফেরদৌস রহমান টিটু (২১) ও আল-আমিন (২১)। 

র্যাব-১০-এর অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) মো. কাইয়ুমুজ্জামান খান বলেন, ওই দিন রাতে র্যাব-১০-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আশরাফুল হকের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহূত ৫টি চাকু ও ৩টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর আশপাশের এলাকায় পথচারীদের মোবাইল, ল্যাপটপ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল চুরি ও ছিনতাই করার কথা স্বীকার করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে।

গত ২৬ জুলাই রাজধানীর খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকা থেকে একটি একে ২২ রাইফেল, চারটি বিদেশি পিস্তল, একটি রিভলভার ও ৪৭ রাউন্ড গুলিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- খান মো. ফয়সাল, জিয়াউল আবেদীন ওরফে জুয়েল ও জাহেদ আল আবেদীন ওরফে রুবেল। ডিবির দাবি— ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ সংঘটনের জন্য তারা ভাড়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবদের বরাত দিয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ সংঘটনের জন্য তারা ভাড়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করত। চাঁদাবাজি ও হত্যা ছিল তাদের প্রধান কাজ। তবে কোথায়, কীভাবে ভাড়ায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় তা জানতে আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।

গত ১০ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলানগর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পৃথক অভিযানে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের ১৩ সদস্যকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহূত সরঞ্জামাদি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আটকরা হলো- নূর মোহাম্মদ ওরফে মামুন (৩০), রিচার্ড ফোলিয়া ওরফে সাগর (২৪), মো. সুমন (২১), মো. জনি (২০), ওয়াসিম মিয়া (২৩), সাদ্দাম হোসেন (২৪), রুবেল (২০), সুজন (১৮), শাহিন (১৮), রুবেল (১৯), আকাশ ইসলাম (১৯), ইউসুফ (১৮) এবং ইলিয়াস হোসেন (১৮)।

র্যাব-২-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) এএসপি মোহাম্মদ সাইফুল মালিক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-২-এর পৃথক টিম জানতে পারে, শেরেবাংলানগর থানাধীন ইউজিসি ও বিপিএসসি ভবনসংলগ্ন এলাকায় ও মোহাম্মদপুরের একতা হাউজিং এলাকায় দেশীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি নিয়ে দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশে অবস্থান করছে। ওই খবরের ভিত্তিতে বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত অভিযান চালায় র্যাব-২-এর পৃথক দল। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর সময় ১৩ ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। রাতে তারা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর সুবিধাজনক এলাকায় চাপাতি, ছোরা, চাকু ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে আসছিল। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads