• মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪২৯
মিন্নিই রিফাতকে হাসপাতালে নেন

ছবি : সংগৃহীত

অপরাধ

রিফাত হত্যার নতুন ভিডিও

মিন্নিই রিফাতকে হাসপাতালে নেন

  • বরগুনা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের আরেকটি নতুন ভিডিও পাওয়া গেছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিসিটিভিতে ভিডিওটি ধারণ করা, যাতে দেখা যায়, রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে কোপানোর পর তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি একাই রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

নতুন ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে মিন্নি একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান। সেখানে দাঁড়ানো এক যুবক রিফাত শরীফকে বহন করা রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। রিফাতের অবস্থা দেখে তিনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই এগিয়ে আসেন। এরপর রিকশা থেকে নামিয়ে অচেতন রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এরপর মিন্নি হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কল দিয়ে কারো সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি হাসপাতালের ভেতরে যান। এর কিছু সময় পর আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও চাচা আবু সালেহ হাসপাতালে যান।

সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে। এ সময় সেখানে রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম ওরফে জন ও তার কয়েকজন বন্ধু হাসপাতালের সামনে আসেন। মঞ্জুরুল বেশ কিছু সময় ফোনে কথা বলেন। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। ১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে অ্যাম্বুলেন্সটি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ও বরগুনা জেলা পুলিশের পৃথক দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। তবে এই ভিডিও কোন ক্যামেরায় ধারণ করা, তা নিশ্চিত করতে পারেনি ওই সূত্র।

এদিকে রিফাত শরীফকে ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনায় ধারণ করা প্রথম ভিডিওটিতে দেখা যায়, রিফাতকে সন্ত্রাসীরা যখন কোপাচ্ছিল, তখন তার স্ত্রী মিন্নি প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন স্বামীকে রক্ষার। এরপর ওই ঘটনায় দ্বিতীয় যে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়, সেখানে রিফাতকে কলেজ গেট থেকে ধরে পূর্ব দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় মিন্নির সন্ত্রাসীদের পেছনে কিছুটা ধীরলয়ে হেঁটে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটি মহল। এই সন্দেহের জের ধরেই মিন্নির শ্বশুর ঘটনার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে রিফাত হত্যায় মিন্নি জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন এবং ওই ভিডিওর উদ্ধৃতি দেন। ১৬ জুলাই মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। মিন্নি উচ্চ আদালত থেকে ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে বাবার বাড়িতে আছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়া যায়নি।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের সামনের এই ভিডিও আমিও পেয়েছি। মিন্নি যে রিফাত শরীফকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, তা কলেজের সামনের ভিডিও এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে। আমি শুরু থেকেই বলে এসেছি, আমার মেয়ে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী বলেন, ভিডিওটি আমি দেখেছি। এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় মিন্নি তার স্বামীকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে কী আছে সেটা আমি এখনো দেখিনি। কারণ আদালতে দেওয়া পুলিশের অভিযোগপত্রের কপি এখনো পাইনি। তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ যদি এই ভিডিওর বিষয় উল্লেখ না করে, তবে তদন্ত প্রতিবেদনটি ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা তার (মিন্নি) বিরুদ্ধে যতটুকু অভিযোগ পেয়েছি, তা বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেছি। এখন নতুন করে কোনো ভিডিও বের হয়েছে কি না, সেটা আমাদের জানা নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads