• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

ছাত্রলীগ-যুবলীগের টর্চার, মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০১৯

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের নির্যাতন এমনকি টর্চার সেল গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এছাড়া কিছুদিন আগে যুবলীগের নেতাদের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েও পাওয়া গেছে নির্যাতনের জন্য টর্চার সেলের অস্তিত্ব। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের মধ্যে এই টর্চার সেল বা নির্যাতনের একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বলে নানা মহলে চলছে সমালোচনা।

বুয়েটের হলে থাকা এক ছাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাকেও শিবির সন্দেহে রাতভর দফায় দফায় পেটানো হয়েছিল। কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে বিষয়টি গোপন করেছিলেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র বলেন, নির্মমভাবে তাকে পেটানো হয়।

তিনি বলেন, আমি আমার এলাকার এক নেতার দুর্নীতি আর ব্যাংকের অর্থ চুরির খবর ফেসবুকে দিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমার অপরাধ। রাতে রুমে ১০-১২ জন এসে আমাকে জেরা করে। বলে আমি শিবির কি না! প্রথমে চড় মারে। এরপর স্ট্যাম্প দিয়ে মারে। আমার পেছনে মারছিল পায়ে মারছিল। ধরেন রাত ১২টা থেকে ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত এভাবে চলেছে।

এদিকে ভুক্তভোগী ছাত্ররা বলছেন, সরকারের সমালোচনা, অন্যায়ের প্রতিবাদ বা দুর্নীতি অনিয়মের খবর কেউ ফেসবুকে প্রচার করলেই সে ছাত্রলীগের জেরার নামে নির্যাতনের টার্গেট হয়েছেন।

রকম হয়রানি আর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বহু ছাত্রকে। এমনকি প্রতিবাদ করলে ছাত্রলীগের হল শাখার নেতারাও আক্রান্ত হয়েছেন।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অপসারণ এবং আবরার ফাহাদের ঘটনার পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্যাতনের শিকার ছাত্রদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্বের কমিটির হল শাখার একজন পদধারী নেতা জানান, ফেসবুকে একটা পোস্টের কারণে তাকে যিনি নির্যাতন করেন, তার দখলে থাকা রুমটি সিলগালা করে দিয়েছে হল প্রশাসন।

বিবিসিকে এই নেতা বলেন, আমাকে চড় থাপ্পড় মারা হয়। পিস্তল মাথায় ঠেকিয়েছিল। কিন্তু মারে নাই। আমিও অনেক ভয় পেয়েছিলাম। এদের কারণেই ছাত্রলীগের দুর্নাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মশিউর রহমান জানান, প্রথম বর্ষেই ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যোগ দেওয়ার পর তাকে পিটিয়ে আহত করে পুলিশে দেওয়া হয়। এরপর থেকে হল ছাড়া হয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, আপনি একটু ভিন্নমতের হলে আপনাকে প্রথম যেটা বলা হবে যে আপনি শিবির! এই শিবির বলে নির্যাতন করা হয়। আর শিবির বলার পর কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায় না।

শুধু বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের হাতে এমন নির্যাতনের একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে শুধু ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনই নয়, নির্যাতন বা টর্চার সেল সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের যুব সংগঠনেও। সম্প্রতি ঢাকায় র্যাবের অভিযানে যুবলীগ নেতাদের অফিসে অবৈধ অস্ত্র ছাড়াও নির্যাতনের জন্য ব্যবহূত সরঞ্জামের সঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার মেশিন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে।

অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের এক নেতার মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগী জানান, রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে আইন আদালত, পুলিশ প্রশাসন কিছুই তোয়াক্কা করতেন না যুবলীগের আটক নেতা। বেআইনিভাবে তার সম্পত্তি আরেকজনকে দখল করে দিয়েছেন যুবলীগের আটক নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যক্তি জানান, একাধিকবার আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে যায় এবং সরাসরি আমাকে বলে দেয় কোনো কিছু করে কোনো লাভ হবে না। যদি আপনি আইনের আশ্রয় নেন পুলিশের কাছে যান আপনার আরো ভয়ানক পরিস্থিতি হবে। এ এলাকার সর্বেসর্বা বলতে তাকেই বোঝাত। সেটাকে মাফিয়া নাম দেবেন না ডন নাম দেবেন বা সন্ত্রাসী নাম দেবেন সেটা আপনারাই ভালো বোঝেন!

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র এবং যুব সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে এমন নির্যাতনের সংস্কৃতি জনমনে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলেন, বিষয়টি শঙ্কার। এই অল্প তরুণ বয়সে তারা কেন এমন নির্দয় নিষ্ঠুর ভূমিকা পালন করবে। আমার মনে হয় আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এটা থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্রলীগের টর্চার সেল বা নির্যাতনকারীদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে দেখছে ছাত্রলীগ। আর অভিযানে আটক হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে যুবলীগ তাদের বহিষ্কার করছে। সরকারি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এসব ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে অনেকে এসব নিয়ে বিব্রত।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যখনই কোনো ছাত্র বা যুবলীগ বা যেকোনো সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেইনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads