• বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জৈষ্ঠ ১৪২৯
হত্যার আগেই খোঁড়া হয়েছিল গর্ত, পরিকল্পনা ছিল পাকা গাঁথুনী দিয়ে ঢেকে দেয়ার

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অপরাধ

কলেজছাত্র সুজন হত্যা

হত্যার আগেই খোঁড়া হয়েছিল গর্ত, পরিকল্পনা ছিল পাকা গাঁথুনী দিয়ে ঢেকে দেয়ার

  • শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিখোঁজের ৪দিন পর ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কলেজছাত্র সুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর মিলছে চাঞ্চল্যকর ও লোহমর্ষক সব তথ্য। খুনীরা ভয়ঙ্কর সব পরিকল্পনা মাফিক ঘটিয়েছে এই হত্যাকান্ড। হত্যা করা হবে তাই দু’দিন আগেই খোঁড়া হয়েছিল গর্ত, পরিকল্পনা ছিল পাকা গাঁথুনী দিয়ে ঢেকে দেয়ার।

নির্ভরযোগ্য ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর একাধিক সূত্রমতে, প্রবাসীর পুত্র কলেজ ছাত্র সুজনকে নিখুঁত ও পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার জন্য খুনীরা দু’দিন আগেই মাঠের ধানক্ষেতে নির্জন সেচ পাম্পের ঘরে কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে রেখেছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল মরদেহ গর্তে রেখে চারিদিক থেকে পাকা করে দিবে! তবে পরিবারের জিডির পরপরই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অব্যাহত তৎপরতায় খুনীদের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত এগোতে পারেনি।

আটক ৩ জনের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, সুজনকে বাড়িতে ডেকে নেয়ার পরপরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে খুনীরা। তাদের তথ্যমতে ধানক্ষেতের বোরিং (সেচপাম্প) ঘর থেকে সুজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বের হয় চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর (রোববার) শেষ বিকালের দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে সার কিনতে সুজন নিজ গ্রাম উপজেলার আউশিয়ার সার দোকানীর কাছে যায়। এসময় পাওনা ৮’শ টাকা নেয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী হাজামপাড়া গ্রামের রাকিব নামের এক যুবক তাকে ফোন দেয়। ফোন পেয়ে রাকিবের ছোট ভাই সাকিবের সাথে শহরের সিনেমা হল রোডে এসে সুজন নিখোঁজ হয়। এরপর সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, সুজন কে মোটরসাইকেলে রাকিব-সাকিবের বাড়ির দিকে নেয়া হচ্ছে। ফুটেজ ধরে পুলিশ অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে সুজনকে রাকিব-সাকিবের বাড়ি নেয়া হয়। এরপর রাত ৮টা সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির পার্শ্বে হাজামপাড়া মাঠের মেহগুনী বাগানে তাকে নিয়ে যায়। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন থেকে সুজনের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয় খুনীরা। এক কোপেই কলেজছাত্র সুজন ঢলে পড়ে মাটিতে। তারপর লাথি দিয়ে ফেলে দেয় ডোবার মধ্যে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার ১০/১৫ মিনিট পর সেখান থেকে টেনে তুলে ঘাড়ে করে ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় মাঠে একাধিকবার পড়ে গেলে আবার টেনে তুলে টিনসেড নির্জন বোরিং ( সেচপাম্প) ঘর এর ভেতরে নেয়। সেখানে আগেই খুঁড়ে রাখা গর্তে সুজন কে ফেলে মাটিচাপা দেয়া হয়। পরিকল্পনা ছিল মরদেহ গুম করে দিবে তাই সেই গর্তে ইট-বালি দিয়ে পাকা করার সিদ্ধান্ত ছিল ।

নিখোঁজের ১দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর শৈলকুপা থানায় দায়েরকৃত জিডি ধরে পুলিশ রাকিবের ছোটভাই সাকিব, নাজমুল ও হৃদয় নামের ৩ জনকে আটক করে পুলিশ এসব তথ্য জানতে পারে। আরো জানতে পারে সুজনের মরদেহ সেই ঘরের ভেতরে পাকা ঢালাই করে রাখার পরিকল্পনা ছিল এসব খুনীদের। তবে পুলিশের হাতে আটক হওয়ায় তাদের গুম পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত এগোতে পারেনি।

পুলিশের হাতে আটক হওয়া খুনীদের সবার বাড়িই পৌরসভার হাজামপাড়া গ্রামে। এই কিশোরদের সবাই মাদকাশক্ত এবং নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। এদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ছত্রছায়াতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। পৌরসভার হাজামপাড়া, সাতগাছি সহ আশপাশের এলাকার অসংখ্য কিশোর-তরুন মাদকাসক্তে জড়িয়ে পড়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এরা ঘটাচ্ছে নানা অপরাধমুলক কর্মকান্ড।

তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে, নিহত সুজন এর বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী জিল্লুর রহমানের পাঠানো টাকায় সুদে-কারবারের জাথে জড়িত ছিল রাকিব-সাকিবরা। ধারণা করা হচ্ছে মোটা অংকের টাকা লগ্নী হয়ে যায় রাকিব-সাকিবের কাছে। সেই টাকা আত্মসাতের জন্যই প্রবাসী জিল্লুর রহমানের ছেলে সুজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় এবং তাকে গুমের পরিকল্পনা ছিল।

পুলিশের হাতে রাকিবের ছোটভাই সাকিব ধরা পড়লেও এখনো খুনীদের অন্যতম রাকিব পলাতক রয়েছে। তারা শৈলকুপার হাজামপাড়া গ্রামের বাবুলের ছেলে। নিহত সুজন পৌরসভার আউশিয়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জিল্লুর রহমানের ছেলে । তারা ১ ভাই ও এক বোন। সুজন শৈলকুপা সিটি ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী ছিল।

শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম সহ পুলিশের ব্যাপক তৎপরতায় এই চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য উন্মোচিত হওয়ার পথে রয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী আটককৃতদের আদালতে নেয়া হয়েছে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি করা হতে পারে। হয়তো বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর এই হত্যার সকল রহস্য।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads