বিকাশ প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রধানত ৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণা কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। প্রথম গ্রুপ মাঠপর্যায়ে অবস্থান করে বিভিন্ন বিকাশের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পূর্বে লেনদেনকৃত বিকাশ খাতার ছবি তুলে নেয় তারা। পরবর্তী সময়ে ওই ছবি হোয়াটসঅ্যাপ-এ দ্বিতীয় গ্রুপের কাছে স্থান উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের হাতে গ্রেপ্তার হয় বিকাশ প্রতারক চক্রের প্রধানসহ ৯ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিকাশ প্রতারক চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানতে পারেন।
ওই প্রতারক চক্রের বরাত দিয়ে কর্মকর্তারা আরো জানান, চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করা বিকাশ প্রতারকরা প্রথম গ্রুপের কাজ শেষে দ্বিতীয় গ্রুপ তার কাছে পাঠানো বিকাশ খাতা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ দোকানদার সেজে কল করে এবং জানতে চায় যে, তাদের কাছে পাঠানো টাকা তারা পেয়েছেন কি না এবং ক্যাশ আউট করেছেন কি না। যদি বলে পেয়েছে কিন্তু টাকা তোলেনি বা ক্যাশ আউট করেনি তখন প্রতারকরা তাদের প্রতারণার বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার শুরু করে। প্রতারণার ছলে বলতে থাকে যে, আমার দোকান হতে একই সময়ে কয়েকটি নাম্বারে পাঠানো টাকা নিয়ে অভিযোগ আসায় তাদের নাম্বার লক করতে গিয়ে আপনার নাম্বারও লক হয়ে গেছে। আপনাকে বিকাশ অফিস হতে ফোন করে আনলক করে দেবে।
অল্প সময়ের ব্যবধানে তৃতীয় গ্রুপ বিকাশ কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস অফিসার পরিচয় দিয়ে, অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশ অফিসের নাম্বার ক্লোনিং করে ফোন দেয়। ফোন করে বিভিন্ন কথার ছলে ওটিপি এবং বিকাশ পিনকোড নিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারক চক্র অ্যাকাউন্ট আনলক করার কথা বলে ভিকটিমের বিকাশ অ্যাকাউন্ট এবং প্রতারক চক্রের বিকাশ অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দিতে বলে।
এইভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকা মাঠপর্যায়ে থাকা সর্বশেষ অর্থাৎ চতুর্থ গ্রুপের নিকট পাঠানো হয়। যারা বিভিন্ন হাত বদল করে ক্যাশ আউট করে, ফলে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
গত শুক্রবার রাজধানীসহ ঢাকা এবং গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিকাশ প্রতারক চক্রের প্রধানসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের নিকট থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহূত বিভিন্ন মডেলের ৫টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড এবং ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলো- সাইফুল ইসলাম (২২), লিটন হোসেন (২৩), জুবায়ের শেখ (২২), গোলাম কিবরিয়া মণ্ডল (১৯), ইমরান মোল্লা (২৩), শাওন হোসাইন মণ্ডল (১৮), মিনজারুল ইসলাম মোল্লা (২৫), আশরাফ মোল্লা (২৬) ও সাগর আহম্মেদ (২৫)। এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে রমনা মডেল থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।