• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯
আবারো এমএলএম জালিয়াতি, হাতিয়ে নিয়েছে ৩০০ কোটি

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

আবারো এমএলএম জালিয়াতি, হাতিয়ে নিয়েছে ৩০০ কোটি

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০২০

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার নামে প্রতারণা এখনো বন্ধ হয়নি। ডেসটিনির প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা টাকা তো ফেরত পায়নি উপরন্তু এখানে কর্মরত একটি চক্র নতুন করে, নতুন নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। মাত্র ১০ মাসে এ চক্রটি সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে ২৮৬ কোটি টাকা। বিনিয়োগের বিপরীতে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তারা বিপুল এ অর্থ হাতিয়ে  নেয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম অনুসন্ধান চালিয়ে এ প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে ৬ জনকে আটক করেছে। আটকের পর তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য জানায়। প্রতারকচক্রটি মাত্র ১০ মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেফতারা হলো- আলামিন প্রধান (এমডি ও সিইও), মো. জসীম, নির্বাহী অফিসার; মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (হিসাব); মো. তানভীর আহম্মেদ, ম্যানেজার (প্রোডাক্টস); মো. পাভেল সরকার, সহকারী ম্যানেজার (প্রোডাক্টস) ও নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ, অফিস সহকারী।

গতকাল মঙ্গলবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য প্রদান করেন।

তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ই-কমার্সের নামে ২৬৮ কোটি টাকার প্রতারণায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ই-কমার্সের নামে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে ডিবি (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিম অভিযান পরিচালনা করে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সংক্রান্তে কলাবাগান থানায় মামলা রুজু হয়। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে মূলহোতা আলামিন প্রধান ও মো. জসীমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে, ১টি হ্যারিয়ার গাড়ি, ২টি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহূত ৬টি ল্যাপটপ, ২টি রাউটার, ২টি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও কোম্পানির সার্ভারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামের এই কোম্পানি গত ১ জানুয়ারি ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান এক সময় ডেসটিনি-২০০০ লি.-এ সক্রিয় ছিল। ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক প্রতারণা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ডিএমডি, ডিরেক্টর, অফিসার সম্মিলিতভাবে মাত্র ১০ মাস সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে ২২ লাখের বেশির মেম্বার আইডি খোলে। এসব আইডি থেকে প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন অ্যাপভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় ৫ লাখ মেম্বার রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, কোম্পানির এমডি আলামিন প্রধান ও কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৮টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়।

এলএমএম কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়, তারা মূলত কোম্পানির Website (http://main.spcworldexpress.com), Facebook Page I Youtube শত শত পোস্ট-এর মাধ্যমে ই কমার্সের কথা বলে সাধারণ জনগণকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীদের Playstore বা ইন্টারনেট SPC World Express Ltd. থেকে নামে একটি মোবাইল App ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজি. করার সময় বাধ্যতামূলক পূর্ববর্তী রেজি.কৃত আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে কোম্পানি প্রদত্ত বিকাশ, নগদ এবং রকেট নাম্বারে অ্যাকাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১২০০ টাকা প্রদান করতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন)-এর ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে।

পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন সম্পর্কে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মীর মোদাচ্ছের হোসেন জানান, যে রেফার করবে সে তার নিচের ৩টি আইডি থেকে ৪০০ টাকা করে কমিশন লাভ করবে। তারপর ঐ ৩ আইডি থেকে যখন ৯ আইডি হবে তখন আপলিংকের আইডি ২০% কমিশন পাবে। তারপর তার ডাউনলিংকে যত আইডি হবে আপার আইডি ১০% হারে কমিশন পাবে, যা মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশে আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই অবৈধ ব্যবসা করে তারা যাতে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত না করতে পারে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করতে অনুরোধ জানান তিনি।

এমএলএম ব্যবসা আড়াল করার কৌশল সম্পর্কে সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান জানান, কোম্পানিটি নামে মাত্র কয়েকটি পণ্য (এলোভেরা শ্যাম্পু, ফেসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুঁড়া ইত্যাদি) শুধু তাদের রেজিস্টার্ড মেম্বারদের কাছে বিক্রি করে থাকে। বিক্রীত লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। গ্রেপ্তারকৃতরা ই-কমার্সের লাইসেন্স দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করায় যে তারা ই-কমার্স করছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads