• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জৈষ্ঠ ১৪২৯

অপরাধ

দেশে নতুন মাদক ‘আইস’র দ্বিতীয় চালান জব্দ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৬ নভেম্বর ২০২০

দেশে নতুন মাদক ‘আইস’-এর দ্বিতীয় চালান জব্দ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ‘আইস’ বাজারজাত করার অভিযোগে আটক করা হয়েছে ৬ জনকে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল নতুন এ মাদককে উচ্চবিত্তদের টার্গেট করেই দেশে বাজারজাত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিছু স্বর্ণ ব্যবসায়ী এ সিন্ডিকেটের সদস্য বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা চন্দন রায় পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে এর পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করে দেশে ‘অভিজাতদের মাদক’ আইসের বাজার তৈরির চেষ্টা করছিলেন তিনি।

দেশে নতুন পরিচিত এ মাদকদ্রব্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মাত্র ১০ গ্রাম আইসের দাম প্রায় লাখ টাকা। প্রতিবার দু-তিনটি কণার সমপরিমাণ মাদক সেবন করতে খরচ হয় অন্তত ১২ হাজার টাকা। এ কারণে এটিকে অভিজাতদের মাদক বলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত বুধবার দিনগত রাতে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চন্দন রায়কে (২৭) আটক করে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) রমনা বিভাগ।

পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর গুলশান, বনানী ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো পাঁচজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকা।

আটক বাকি পাঁচজন হলেন- সিরাজ (৫২), অভি (৪৮), জুয়েল (৫০), রুবায়েত (৩০) ও ক্যানি (৩৬)। তারা নতুন এ মাদক বিক্রি, সেবন ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত।

গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আইস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একেবারেই নতুন মাদক। যা সেবু, ক্রিস্টাল ম্যাথ, ডি ম্যাথসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি ক্ষুদ্র দানাদার জাতীয় মাদক যা ক্রিস্টাল আকারে দেশে আনা হয়। আইসের কেমিক্যাল নাম মেথান ফিটামিন, যার উৎপত্তিস্থল অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন।

তিনি বলেন, নতুন এ মাদক সেবনে ইয়াবার চেয়েও ৫০-১০০ গুণ বেশি মারাত্মক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এটি মূলত স্নায়ু উত্তেজক মাদক, যা সেবনের ফলে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হরমোনের উত্তেজনা এক হাজার গুণ বেড়ে যায়। এর ফলে ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হওয়ার শঙ্কা থাকে, এটির তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ধীরে ধীরে দাঁতও ক্ষয়ে যায়। এ ছাড়া এটি সেবনে স্থায়ী হ্যালুসিনেশন সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশে কাচের পাইপ দিয়ে তৈরি বিশেষ পাত্র ‘বং’ দিয়ে ধূমপান আকারে আইস ব্যবহারের বিষয়টি দেখা গেছে।

এ চক্রের মূলহোতা আটক চন্দন রায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলেছেন, তার প্রবাসী আত্মীয় শংকর বিশ্বাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে ব্যাগেজে করে তিনি বিমানে দেশে আনতেন আইস। আইসের মূল বাজার মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণি।

মাত্র দু-তিনটি কণার মাধ্যমে একবার এ মাদক সেবন করতে প্রায় ১২ হাজার টাকা খরচ হয়, তাই নিম্ন বা মধ্যবিত্তদের পক্ষে এটি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। উচ্চবিত্তদের বিভিন্ন পার্টি বা উচ্চবিত্ত সন্তানদের টার্গেট করে আইসের বাজার সৃষ্টির চেষ্টা করছিল চক্রটি।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, চন্দন রায় পেশায় একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তবে তিনি নতুন এ মাদক আমদানি করে অভিজাত শ্রেণির মধ্যে পরিচিত করছিলেন। আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি, মাদকের উৎস, আনার প্রক্রিয়া, অর্থায়ন এবং দেশের অন্যান্য চক্রের বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী চন্দন রায়ের বিষয়েও তদন্ত চলছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ‘আইস’ মাদকসহ রাকিব নামের এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ চক্রের কথা প্রথম জানতে পারে। এ ঘটনার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইস চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাদের গ্রেপ্তারের পর জানতে পারে এ মাদক সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মূলহোতা হাসিব বিন মোয়াম্মার রশিদ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ৫ গ্রাম আইস মাদকসহ রাকিব নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আইস মাদকের বাজার যাচাই ও তৈরি করতেই তাকে এই মাদক দিয়েছিল একটি চক্র। রাজধানীর ধানমন্ডির ঝিগাতলার ৭/এ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বরের নিজ বাড়ির বেজমেন্টে ল্যাব বসিয়ে আইস তৈরি করছিল হাসিব বিন মোয়াম্মার রশিদ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads