• সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জৈষ্ঠ ১৪২৯
২০ হাজারের বিনিময়ে নকল আসামি ‘রকি’

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

২০ হাজারের বিনিময়ে নকল আসামি ‘রকি’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০২০

২০ হাজার টাকায় প্রকৃত আসামিকে বাঁচাতে নকল আসামি সেজে জেল খাটছেন রকি নামের এক যুবক। অথচ ওই মামলার প্রকৃত আসামি আজাদ দিব্যি গ্রেপ্তার এড়িয়ে ঘুরে  বেরিয়েছেন। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় আজাদ লাপাত্তা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামে।

মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়ের হওয়া মামলার নকল আসামি সেজেছেন রকি। বর্তমানে ‘রকি’ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘রকি’ নিজেকে মোঃ আজাদ পরিচয় দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে ওই মামলায় আত্মসমর্পণ করেন। ‘রকি’ পরবর্তীতে আইনজীবীর কাছে স্বীকার করেছেন তিনি ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আজাদের পরিবর্তে আত্মসমর্পণ করেছেন।

এমন জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে ওই আইনজীবী আজাদ তথা ‘রকি’র মামলা লড়বেন না বলে আদালতকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

অ্যাডভোকেট মোঃ আরিফুর জামান আরিফ বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দায়ের হওয়া মামলার এজাহারনামীয় আসামি মোঃ আজাদ পরিচয়ে এক ব্যক্তি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি নিজেকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন হারবাং এলাকার মোঃ আব্বাসের ছেলে মোঃ আজাদ বলে আমার কাছে পরিচয় দেন এবং ওই মামলায় আইনগত সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করেন। আমার মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আজাদ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি ওই ব্যক্তি মূল আসামি আজাদ নন এবং এ মামলার সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

অ্যাডভোকেট মোঃ আরিফুর জামান আরিফ বলেন, এমন জালিয়াতি ও প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে আমি আদালতকে জানাই এ মামলা আমি লড়বো না। আমি তার পক্ষে পরবর্তী কোনো তারিখে আদালতে মুভও করিনি। তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তার কাছে আমি জানতে চাই- তিনি কেন নিজেকে আজাদ পরিচয় দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন? ওই ব্যক্তি তখন আমাকে জানান, ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আজাদের পরিবর্তে তিনি আত্মসমর্পণ করেছেন।

ঘটনা ফাঁস হয় যেভাবে,  মোঃ আজাদ পরিচয় দিয়ে ২ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট মোঃ আরিফুর জামান আরিফের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ‘রকি’ নামে ওই ব্যক্তি। আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদনও করেন তিনি। কিন্তু আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

২১ সেপ্টেম্বর মোঃ আজাদ পরিচয় দিয়ে কারাগারে থাকা ওই ব্যক্তিকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শামসুল ইসলাম।

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিতে থাকেন ওই ব্যক্তি। পরে পুলিশ এ মামলায় জামিনে থাকা ২ নম্বর আসামি নুর হোসেনকে তার বিষয়ে জানতে চাইলে নুর হোসেন ওই ব্যক্তি এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মোঃ আজাদ নয় বলে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তি তার নাম ‘রকি’ বলে স্বীকার করেন।

পুলিশের কাছে ‘রকি’ জানায়, তিনি কোতোয়ালী থানাধীন কর্ণফুলী নামে একটি হোটেলে বয় হিসেবে চাকরি করতেন এবং তিনি কখনো হোটেল ইমামগঞ্জ আবাসিকের মালিক বা পার্টনার ছিলেন না।

আসল আজাদকে খুঁজছে পুলিশ

মোঃ আজাদ পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করা ‘রকি’র সম্পর্কে জানতে পেরে এখন এ মামলার এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মোঃ আজাদকে খুঁজছে পুলিশ।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই মোঃ শামসুল ইসলাম বলেন, আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তি মামলার এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মোঃ আজাদ নয় বলে নিশ্চিত হয়েছি। মূল আসামি মোঃ আজাদকে খুঁজছি আমরা। যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেছে তিনি কেন এ কাজ করলেন সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি।

গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চকবাজার এলাকায় হোটেল ইমামগঞ্জ আবাসিকে অভিযান চালিয়ে দুই ভিকটিম কিশোরীকে উদ্ধার করে চকবাজার থানা পুলিশ। সেখানে নারীদের দিয়ে অবৈধ দেহ ব্যবসার দায়ে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা দায়ের হয়েছিল মোঃ আজাদসহ (৩০) আটজনের বিরুদ্ধে। মামলা নম্বর : ০৬ (১২) ১৯। এ মামলায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। পলাতক ছিলেন প্রধান আসামি মোঃ আজাদসহ তিনজন।

মোঃ আজাদ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন হারবাং এলাকার মোঃ আব্বাসের ছেলে। তিনি চকবাজার এলাকার হোটেল ইমামগঞ্জ আবাসিকের মালিক। এ হোটেলে নারীদের দিয়ে অবৈধ দেহ ব্যবসা করানো হতো।

মোঃ আজাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চকবাজার থানায় আরো একটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads