• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

জাল স্ট্যাম্পচক্রে জড়িত সরকারি কর্মীরাও!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০২০

১৮ কোটি টাকা মূল্যের জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফি জালিয়াতচক্রের সঙ্গে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশ পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মিশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে গত ১৯ নভেম্বর পল্টন ও আশুলিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফি তৈরি করত। এ সময় জাল স্ট্যাম্প  প্রস্তুতের জন্য ব্যবহূত একটি কম্পিউটার, একটি  প্রিন্টার, দুটি বড় ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন ও একটি ভারী সেলাই মেশিন উদ্ধার করা হয়। মিশু বিশ্বাস বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জাল স্ট্যাম্প কিছু অসৎ ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কারা কারা জড়িত আছে তা তদন্তে বের হয়ে আসবে এবং অনতিবিলম্বে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। চক্রটি জাল স্ট্যাম্প, ডাকটিকিট, কোর্ট ফিগুলো কিছু অসৎ ভেন্ডারদের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। এ কাজে সহায়তা করত অসাধু তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা। পেপারগুলোর প্রস্তুত থেকে শুরু করে বিতরণ, ব্যবহার পর্যন্ত পুরো বিষয়টিই তারা জানে। এছাড়া আদালতেরও বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মচারীর তথ্য পেয়েছি আমরা। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তথ্যের সত্যতা মিললে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাঁচ হাজার টাকার কোর্ট ফি’র একটি বড় জাল স্ট্যাম্প বানাতে তাদের খরচ হয় দশ থেকে পনেরো টাকা। সেই দশ টাকার কাগজে স্ট্যাম্পের প্রচ্ছদ ও ভুয়া নম্বর দিয়ে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করত তারা। পাঁচশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত স্ট্যাম্প জাল করার তথ্যও আমরা পেয়েছি। এ চক্রটির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অসাধু উকিল, ভেন্ডার ও দলিল লেখকও। তারাই সুকৌশলে আসল স্ট্যাম্পের মধ্যে জাল স্ট্যাম্প ঢুকিয়ে দিচ্ছেন।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সিভিল মামলার আইনজীবী আনোয়ার হোসেন মিঠু বলেন, জাল স্ট্যাম্পযুক্ত কোনো চুক্তি করলে, সাধারণত চুক্তির কোনো সমস্যা হয় না। তবে নানাবিধ জটিলতা থাকে। স্ট্যাম্প জাল-এটা প্রমাণিত হলে আবার সমমূল্যে নতুন স্ট্যাম্প সেখানে সংযুক্ত করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে যিনি ইচ্ছা করে প্রতারণা করার চেষ্টা করেছেন, তার নামে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। তাছাড়া কোনো বৈধ ভেন্ডার হয়েও যদি  বেশি লাভের আশায় জাল স্ট্যাম্প বিক্রি করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

উল্লেখ্য, স্ট্যাম্প ও দলিল আসল-নকল যাচাই করার জন্য আলাদা লেজার মেশিন দিয়ে তা নির্ণয় করতে হয়। অন্য কোনো প্রক্রিয়া নেই। আর তাই স্ট্যাম্প ও ডাকটিকিট ডিজিটালাইজেশন করার জন্য টাকশালের কাছে আবেদন করবে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সম্পর্কে মিশু বিশ্বাস আরো বলেন, আমরা শিগগিরই টাকশালের কাছে স্ট্যাম্প ও দলিল ডিজিটালাইজেশন করার জন্য আবেদন করব। এতে করে সহজে মানুষ যাতে জাল স্ট্যাম্প ও ডাকটিকিট নির্ণয় করতে পারে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারিয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষও প্রতারিত হয়েছে। এ ধরনের অভিযান আমরা অব্যাহত রাখব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads