• বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

সাইবার ক্রাইম

শিকার ৮০ শতাংশই নারী

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইমের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন নারীরা। এর মধ্যে  ১৬ থেকে ২৪ বছরের নারীই বেশি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সাইবার ক্রাইমের শিকার যত নারী অভিযোগ করছেন তার চেয়ে বেশি নারীই থাকছেন নিশ্চুপ।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বর্তমানে ১১ কোটি মানুষের হাতে আছে আধুনিক সেল ফোন। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন ৭ কোটিরও বেশি মানুষ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যা আছেন নারী। আর এই নারীদেরই টার্গেট করছে পেশাদার-অপেশাদার অপরাধীরা। প্রেম-প্রলোভনসহ নানা ফাঁদে ফেলে তাদের ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধের বেশিরভাগই প্রতারনা ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ঘটনা।

সাইবার ক্রাইম রোধে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, সিআইডি, ডিবিসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট পৃথক শাখা খুলেছে। সেখানে প্রতিদিনই সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে সেইসব অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সাইবার অপরাধের শিকার অধিকাংশই নারী-পুরুষই সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অভিযোগ জানাতে চান না। ফলে কত সংখ্যক নারী-পুরুষ প্রতিদিন সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যানও পাওয়া যাচ্ছে না।

সাইবার অপরাধের শিকার নারীরা যাতে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন এজন্য গত বছরের শেষ দিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে নতুন একটি শাখা খোলা হয়। ৩ মাসে সেখানে ৫ হাজারেরও বেশী নারী অপরাধের ঘটনা জানিয়েছেন। অন্যদিকে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারে প্রতিদিন গড়ে একশটি অভিযোগ জমা হচ্ছে বলে জানা যায়।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে চালু করা হয় পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিএসএসডব্লিউ) নামে একটি ফেসবুক পেজ। সাইবার জগতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পেজটি চালু করা হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশের নতুন এই শাখা উদ্বোধনকালে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এটা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েরা এ অপরাধের বেশি শিকার হচ্ছে। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে ১১ কোটি মানুষ সেল ফোন ব্যবহার করছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৭ কোটি মানুষ। ওই সময় তিনি আরো বলেন,বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল অ্যাক্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, টেলি-কমিউনিকেশন অ্যাক্টে এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯৯টি মামলা হয়েছে যার অধিকাংশ ঘটনার ভিকটিম বা শিকার নারী।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি মীর আবু তৌহিদ জানান, শুরুর পর থেকে গত ৩ মাসে(১৫ ফেব্রুয়ারি ’২১) মোট ৫ হাজার ১২৩টি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন শাখার এএসপি শাকিলা ইয়াসমিন সূচনা বলেন, সাইবার জগতে হয়রানির শিকার নারীরা এখানে নির্ভয়ে তাদের সমস্যা জানাতে পারে। ইচ্ছে করলে তারা তাদের পরিচয়ও গোপন রাখতে পারছেন। সমস্যা পাওয়ার পর তারা সেসব গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। ইন্টারনেট ব্যবহারে সবাইকে আরো সতর্কতার পরামর্শ দেন তিনি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি জামিল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান,  তাদের কাছে প্রতিদিন শতাধিক অভিযোগ আসে। তার মধ্যে থেকে যাচাই-বাছাই করে গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সিআইডি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)-এর সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জুনায়েদ আহমেদ সরকার বলেন,নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর অতিরিক্ত কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রতিনয়তই সাইবার অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এসবের শিকার হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়েই। তবে ক্রাইমের শিকার ৮০ ভাগই নারী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads