• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪২৯
ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে পরিবহন কর্মীরা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে পরিবহন কর্মীরা

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৩ মার্চ ২০২১

বিলাসবহুল এসি বাসের চালক সুমন মিয়া। ১০ বছর ধরে আন্তঃজেলার বিভিন্ন রুটের পরিবহন চালক ছিলেন। চালক হিসেবে সুনামও ছিল। এরই মাঝে সৌদি আরব যান। সেখানে কাজ করেন ৫ বছর। হজ করেন তিনবার, ওমরাহ করেছেন ১২ বার। বছরখানেক আগে দেশে ফিরে ঢাকা কক্সবাজার রুটে হানিফ পরিবহনের এসি বাসের চালক হিসেবে যোগ দেন। গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য আসে সুমন মিয়া কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান ঢাকায় পাচার করছে। এমন তথ্য পেয়ে তার ওপর নজর রাখে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসার পর ভোরে গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম তাকে বাসের ভেতরেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে সুমন মিয়া ২০ হাজার ইয়াবা ভরতি প্যাকেট বের করে দেয়। হজ ও ওমরা করা এমন ধার্মিক লোকের ইয়াবার কারবার দেখে হতবাক হন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল বাসের সুপারভাইজার মেহেদির কাছেও ইয়াবা আছে। তাই তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ১০ হাজার পিস ইয়াবা বের করে দেয় মেহেদি।

গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে সুমন মিয়া বলেন, প্রতি পিস ইয়াবা ১০ টাকা হিসেবে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতেন। ২০ হাজার পিস ইয়াবাতে তিনি পেতেন ২ লাখ টাকা। একই হিসেবে মেহেদি পেত ১ লাখ টাকা। একবার ট্রিপেই দুজনে ৩ লাখ টাকা পেত। সুমন মিয়া জানান, লোভে পড়ে দু-তিন মাসে ১০ থেকে ১৫ বার এভাবে ইয়াবা আনা-নেওয়া করেছেন। ঢাকায় আনার আগে একটি নম্বর দেওয়া হতো তাকে। ঢাকায় ওই নম্বরের ব্যক্তি এসে টাকা দিয়ে ইয়াবা নিয়ে চলে যেত। একই তথ্য দেন বাসের সুপারভাইজার মেহেদিও।

গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, শুধু সুমন আর মেহেদি নয়, এদের মতো আরো অনেক বাসচালক হেলপার জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার কারবারে। প্রতি পিস ইয়াবাতে ১০ টাকা করে তাদের দেওয়া হয়। অর্থাৎ একজন বাসের চালক একবার ২০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আসতে পারলে ২ লাখ টাকা পায়। আর একজন বাসের চালক খুব সহজেই ২০ হাজার পিস ইয়াবা আনা সম্ভব। এ কারণে লোভে পড়ে মরণ নেশা ইয়াবার কারবারে জড়িয়ে পড়ছে তারা। সূত্র জানায়, মাত্র তিন বছরে তিনশর বেশি বিলাসবহুল বাসচালক ও সুপারভাইজারকে ইয়াবা পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের চালক আটক হয়েছে প্রায় ৫শ।

গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবহন কর্মীদের ইয়াবার কারবারে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। তাদের এটা বোঝা উচিত, ঝুঁকিপূর্ণ, বিপজ্জনক ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, আগের চেয়ে অনেক বেশি নজরদারি বাড়িয়েছেন তারা। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার রুটের যেসব টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়া হয় সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এমনকি সব গাড়ি চালকের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছে। এদের একটি ডেটাবেজে নিয়ে এসে নজরদারি করা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম বা কক্সবাজার থেকে ছাড়ার সময়ও তাদের ওপর নজরদারি করা হয়। অনেক সময় ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা এ কারবার করছে। যারা ধরা পড়বে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, বাসচালক-সুপারভাইজার চাকরির অংশ হিসেবেই বিভিন্ন রুটে আসা-যাওয়া করে। তাই মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক আনা-নেওয়ায় পরিবহনকর্মীদের টার্গেট করে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে। তিনি বলেন, সম্প্রতি পরিবহন কর্মীদের সম্পৃক্তা বেড়ে গেছে। তাই নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ৩ বছরে এ ধরনের বাসের চালক, সুপারভাইজারসহ ৩ শতাধিক পরিবহন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কাভার্ডভ্যান, ট্রাক পিকআপ মিলিয়ে আরো কয়েকশ জনকে আটক করা হয়। তবে পরিবহন কর্মীদের মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়া উদ্বেগজনক।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তের ফাঁকফোকর গলিয়ে যে মাদক আসছে আগে সেটি বন্ধ করতেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্ত সুরক্ষিত থাকলে কেউ মাদকও আসবে না, কেউ মাদকে জড়িয়েও পড়বে না।   

এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানাধীন এলাকা থেকে লবণভরতি কাভার্ডভ্যান থেকে ১৯ হাজার ১৫০টি ইয়াবাসহ চালক ও সহযোগীকে আটক করে র্যাব। সোনারগাঁ আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় বিসমিল্লাহ ফিলিং স্টেশনের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের আটক করা হয়।

র‍্যাব-১১’র অ্যাডিশনাল এসপি জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, গোপনে সংবাদ পেয়ে অভিযান চালায় র‍্যাব। পরে একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি চালিয়ে ১৯ হাজার ১৫০টি ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। এ সময় পাচারের কাজে ব্যবহূত কাভার্ডভ্যানটিও জব্দ করা হয়।

তিনি আরো জানান, কাভার্ডভ্যানের ভেতরে বিশেষ কৌশলে ইয়াবা লুকানো ছিল। পরে লবণ সরিয়ে মেশিন দিয়ে টিন কেটে ১৯ হাজার ১৫০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে ইয়াবা চোরাচালানে চালক ও সুপারভাইজারের সম্পৃক্তা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads