• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯
এনআইডির ছবি বদলে ব্যাংকঋণ নিত তারা

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

এনআইডির ছবি বদলে ব্যাংকঋণ নিত তারা

গ্রেপ্তার ৫, বরখাস্ত ইসির ৪৪ কর্মচারী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মার্চ ২০২১

নিখুঁত প্রতারণার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা একটি প্রতারকচক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক কিংবা ক্রেতা সেজে এই প্রতারণা করত। এভাবে তারা ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের সহযোগিতা করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কয়েকজন কর্মচারী। এমন ৪৪ কর্মচারীকেও ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা ৫ প্রতারক হলো-আল-আমিন ওরফে জমিল শরীফ, খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুৎ, আব্দুল্লাহ আল শহীদ, রেজাউল ইসলাম ও শাহজাহান। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার  ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় ঢাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করে। সেখানে উল্লেখ করা হয় একটি চক্র ভুয়া এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিনসহ তথ্য জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট লোন নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে।  ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চক্রটি কৌশলে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে থেকে ফ্ল্যাট কিনবে বলে তার এনআইডি ও অন্যান্য কাগজ নেয়। এরপর নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মচারীদের সহযোগিতায় এনআইডির সব তথ্য ঠিক রেখে শুধু ছবি পরিবর্তন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করে। ব্যাংক এই ভুয়া এনআইডি সার্ভারে যাচাই করলে সব তথ্যই সঠিক দেখতে পায়। সার্ভারের এসব তথ্য দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং তারা ঋণ অনুমোদন করে।

ওই মামলার সূত্রে প্রথমে বিপ্লব নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানায়, ভুয়া এনআইডি তৈরির সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ প্রতারকচক্রের মূল হোতা আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করে। আল-আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যদের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় বিদ্যুতকে। বিদ্যুৎ ও আল-আমিন তাদের অন্য সহযোগীদের কখনো ক্রেতা, আবার কখনো বিক্রেতা, কখনো জমির মালিক, কখনো ফ্ল্যাটের মালিক সাজিয়ে প্রতারণা করে। আর আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মিডলম্যান হিসেবে কাজ করে। রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে।

প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রথমে প্রতারকরা ব্যাংকে গিয়ে ফ্ল্যাট কেনার জন্য লোন চায়। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো ফ্ল্যাট কিনবেন সেখানে ব্যাংক ভিজিট করবে। তখন প্রতারকরা ভিজিটের জন্য ব্যাংকারসহ ফ্ল্যাট দেখতে যায়। প্রতারকরা এর আগেই সাইনবোর্ড দেখে ঠিক করে রাখে কোন ফ্ল্যাট বিক্রি হবে। তারপর ব্যাংকের লোকসহ ফ্ল্যাট ভিজিটে গেলে ব্যাংক সবকিছু ঠিক দেখতে পায়।

পরে প্রতারক দল ফ্ল্যাট মালিকের কাছ থেকে এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপ২েত্রর ফটোকপি নিয়ে আসে। সরল বিশ্বাসে ফ্ল্যাট মালিক এনআইডি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্র দিয়ে দেয়। তারপর প্রতারকরা ইসির নিম্ন পর্যায়ের কিছু কর্মচারীর সহায়তায় ফ্ল্যাট মালিকের এনআইডি হুবহু নকল করে শুধু ছবি পরিবর্তন করে এনআইডি তৈরি করে, যে এনআইডি সার্ভারে বা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ব্যাংকের কর্মকর্তারা এনআইডি সার্ভারে সার্চ দিলে তা সঠিক দেখতে পান।

এরপর ব্যাংক প্রতারকদের অফিস ভিজিটে গেলে সেখানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সবকিছু ঠিকঠাক দেখতে পান। কারণ ব্যাংকের লোকজন যাওয়ার আগেই তারা ২/১ মাসের জন্য অফিস ভাড়া নিয়ে সাজিয়ে রাখে। এরপর ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করার দিন ব্যাংকের লোক উপস্থিত থাকেন। সবকিছু ঠিক দেখে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন হওয়ার দু-একদিন পর লোনের পে-অর্ডার দিয়ে দেওয়া হয় ফ্ল্যাটের সাজানো ক্রেতা ও বিক্রেতাকে। পরে যখন লোনের কিস্তি পরিশোধ করে না তখন তারা প্রতারকদের দেওয়া এনআইডির বিস্তারিত দেখতে গেলে ব্যাংক বুঝতে পারে যে, ব্যাংক প্রতারিত হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও ও পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads