• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

ইয়াবাসহ ঢাকায় রোহিঙ্গারা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ সতর্কতা অভিযান

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০২১

এবার রাজধানীতে ইয়াবাসহ ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। গত শনিবার সন্ধ্যায় ভাটারায় ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটকের পর রাজধানীর প্রতিটি থানা ও গোয়েন্দা বিভাগ বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। মাঝে মাঝে রাজধানীতে পর্যন্ত ইয়াবা নিয়ে রোহিঙ্গারা চলে আসায় এই সতর্কতা বলে জানা গেছে। এরইমধ্যে সম্ভাব্য অনেক স্থানেই অভিযান চালানো হয়েছে।

এরআগে কক্সবাজার ও আশপাশের এলাকায় ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটকের খবর পাওয়া গেলেও রাজধানীতে রোহিঙ্গা চলে আসায় পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। ভাটারা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোক্তারুজ্জামান বলেন, ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আটকের পর থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আটক রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে আরো কারা যুক্ত রয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক ভাটারা এলাকায় অবস্থান করছে। এরপর থানা এলাকাজুড়ে বিশেষ নজরদারি শুরু করা হয়।  সব ডিউটিরত অফিসারদের সন্দেহভাজন যুবকদের তল্লাশির নির্দেশ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সন্দেহভাজন ৪ জনকে ঘুরাফেরা করতে দেখে থানার সাব ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথায় সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে ফয়সাল নামের যুবক জানায় সে রোহিঙ্গা। পেটের ভেতর ২ হাজারের বেশি ইয়াবা নিয়ে টেকনাফের কুতুপালং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ঢাকায় এসেছেন। পরে তাকেসহ অন্য তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। বিশেষ কৌশলে ২ হাজার ৫৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা যুবক ফয়সাল বাংলাদেশি মিজানুর রহমান, ইমরান ও নূর মোহাম্মেদের সঙ্গে সে ইয়াবা নিয়ে আসে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা যুবককে আটকের পর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি বলেন, আরো রোহিঙ্গা কেউ এসেছে কি না সেজন্য এ অভিযান চালানো হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি রয়েছে। নিয়মিত অভিযানও পরিচালিত হয়।

এদিকে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটকের পর রাজধানীর প্রত্যেকটি থানায় বিশেষ সতর্কতা পালনের নির্দেশ দেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রতিটি থানাকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকেও অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ডিএমপির ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এম হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীতে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা যুবক আটকের পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিমকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ ব্যবস্থায় তারা থাকে। রোহিঙ্গারা যেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যেতে পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি থাকে। এ নজরদারি গলিয়ে রাজধানী পর্যন্ত ইয়াবা আসার ঘটনায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবকরা ক্যাম্পের বাইরে রাজধানীতে পর্যন্ত ইয়াবা নিয়ে আসার খবর উদ্বেগজনক। এর অর্থ হলো তারা ক্যাম্পের বাইরেও ইয়াবা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, রাজধানীতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা ছাড়াও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ডিএমপির ৫০ টি থানা এলাকায় এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে থানার ওসিরা দায়িত্বরত অফিসারদের এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। দায়িত্বরত অফিসাররা সন্দেহভাজনদের দেখামাত্র তল্লাশি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর বিশেষ বিশেষ এলাকায় অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বস্তিতে নজরদারি রাখা হয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকা, লালবাগ, কামরাঙ্গীচর, বনানীর কড়াইল বস্তি, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, কুড়িল বিশ্বরোড, রামপুরা, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখানসহ কয়েকটি এলাকাকে বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

রামপুরা থানার অফিসার্স ইনচার্জ শাহিন ফকির বলেন, থানা এলাকার কিছু এলাকা আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি। বিভিন্ন সোর্স লাগানো হয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখা গেলে যেন পুলিশকে জানানো হয় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেরে বাংলানগর থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আহাদ আলী বলেন, থানা এলাকার কিছু এলাকাকে আমরা চিহ্নিত করে নজরদারির আওতায় এনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

কামরাঙ্গীচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে থানার অন্য অফিসারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখামাত্র তল্লাশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর মাদকের ব্যাপারে অফিসার কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।

গত ডিসেম্বরে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ১১ হাজার ২৫০ পিস ইয়াবাসহ দুজনকে আটক করে র্যাব-১। আটককৃতরা হলেন- রফিক (১৯) ও এনামুল হক (২৫)। এদের মধ্যে রফিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকে বলে জানা গেছে। উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের উত্তরা রাজউক কলেজের পশ্চিমে ঈশা খাঁন অ্যাভিনিউ থেকে তাদের আটক করা হয়েছিল।

র্যাব-১ এর অপারেশন্স অফিসার সামিরা সুলতানা বলেন, আটককৃতরা টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে ঢাকায় বিক্রি করত। তাদের মধ্যে রফিক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকে। সেখান থেকেই ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে এসে বিক্রি করে। এদিকে র্যাবের পক্ষ থেকে এ ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads