• সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

মাদকের আল‍ামত নষ্ট, সুবিধা আসামিদের

  • সালাহ উদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ১৪ মার্চ ২০২১

বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় নষ্ট হচ্ছে মাদকের আলামত। আর এর ‘সুফল’ পাচ্ছেন মাদক মামলার আসামিরা। স্থানীয় সাক্ষীর অভাব, তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতিসহ বিভিন্ন কারণে তারা এসব ‘সুবিধা’ পাচ্ছেন। এতে খালাস পাচ্ছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মাদক মামলার আসামি। পরে তারা জড়িয়ে পড়ছেন মাদক কারবারে। ফলে মাদক নির্মূলে সরকারের নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বিদ্যমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আসামির সাজা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। অন্য যে-কোনো মামলায় যেখানে বাদীকে প্রমাণ করতে হয় আসামি দোষী; সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর ৫৫ ধারা অনুযায়ী আসামিকেই প্রমাণ করতে হয় তিনি দোষী না। তারপরও ব্যর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এসব তথ্য। ২০১৯ সালে ১০ বছরের নিষ্পত্তিকৃত মাদক মামলা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় ডিএনসি। সেখানে বলা হয় ৪৮ শতাংশ মামলাই রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আসামি খালাস পাওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয় ৮টি কারণ। সেগুলো হচ্ছে-ত্রুটিপূর্ণ এজাহার, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা একই ব্যক্তি, জব্দ তালিকায় স্থানীয় সাক্ষীদের সাথে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের অমিল, জব্দ তালিকায় উল্লিখিত সাক্ষী ও অন্যান্য সাক্ষী অদালতে হাজির করাতে ব্যর্থতা, উপযুক্ত, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থতা, আইনের বিধান অনুযায়ী জব্দ তালিকা তৈরি করতে না পারা, মামলার বাদি ও অভিযানকারী দলের সদস্যদের বক্তব্যে অমিল এবং মামলার বাদি ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য না দেওয়া।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কে এম সাজ্জাদ হোসেন শিহাব বলেন, এজাহারে বিভিন্ন ত্রুটির কারণে খালাস পেয়ে যান মাদক মামলার আসামিরা। কার কাছ থেকে আলামত উদ্ধার করা হয়েছে তা এজাহারে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে না। আবার এজাহারে উল্লেখ থাকলেও জব্দ তালিকায় বলা থাকে না। জব্দ তালিকায় যেসব সাক্ষীদের কথা উল্লেখ থাকে তারা আশপাশের সাক্ষী না। আবার জব্দের সময় যে পরিমাণ মাদকের কথা উল্লেখ থাকে কেমিকেল টেস্ট রিপোর্টে তা কমে যায়।

এসব প্রসঙ্গে ডিএনসির ময়মনসিংহের উপ পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খোরশেদ আলম বলেন, স্বীকার করেন অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে ধারায় ভুল থাকে। স্থানীয় সাক্ষী না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী মাদক মামলায় দুই জন স্থানীয় সাক্ষী থাকা প্রয়োজন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় সাক্ষীরা মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে চায় না। বাদীও বদলিজনিত কারণে অনেক সময় তিনি নিজেও সাক্ষী দিতে পারেন না। কারণ তার পূর্বে ঠিকানায় চিঠি যাওয়ায় তিনি তা জানতেও পারেন না। আলামত নষ্ট ও কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে জব্দ আলামতও নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আদালতে বিচারকের সংকট থাকায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে দেরি হয়ে যায়। ততদিনে জব্দ আলামতও নষ্ট হয়ে যায়। যার সুবিধা পান আসামিরা।

জানা যায়, সাক্ষী ও বিচারক সংকটের কারণে ১৭ বছর ধরে ঝুলে আছে দেশের প্রথম ইয়াবা মামলার বিচার। ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে গুলশানের নিকতনে প্রথম ইয়াবা উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মামলার ১৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকীদের জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ এফ এম রেজাউল করিম হিরণ বলেন, মামলাটি পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন। পরিবেশ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারক না থাকাও বিচার বিলম্বিত হওয়ার অন্যতম কারণ। গত বছরের জুন থেকে এই মামলার কোর্টের বিচারক নেই। মূলত করোনাকালীন ছুটিজণিত কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকেই এই মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আদালতে বিচারাধীন মামলার মধ্যে অধিকাংশই মাদক মামলা। প্রতি বছর গড়ে এক লাখেরও বেশি মাদক মামলা হচ্ছে। সেই সাথে অন্যান্য মামলাও হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক মামলা পরিচালনার জন্য যথেষ্ট সংখ্য বিচারক নেই। শুধু মাদক মামলা পরিচালনার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads