• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
স্বামীর হাতে খুন স্ত্রী-সন্তান

প্রতীকী ছবি

অপরাধ

স্বামীর হাতে খুন স্ত্রী-সন্তান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০২১

হাসির ৯ বছরের সংসার। ৫ বছরের ফুটফুটে নীরবও তাদের কোলে। কতই না স্বপ্ন উঁকি দিত মনে। একদিকে শ্বশুর-শাশুড়ি আর মাঝেমধ্যে স্বামীর নির্যাতন, তারপরও দরিদ্র বাবা-মার কথা চিন্তা করে সংসারে থেকে যাওয়ার প্রবল চেষ্টা করেন। সেই চেষ্টাই কাল হয়ে দাঁড়াল। স্বামীর নির্মমতার বলি হতে হলো। এই বলি শুধু হাসি একা না, সাথে তার ৫ বছরের ছেলে নীরবও। ঘাতক স্বামী রুবেল দুজনকেই হত্যার পর কড়াইল বস্তির ডোবার মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার খবর পাওয়ার পর বনানী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। আর এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল থানায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার বড়ুয়া এলাকায় ২০১১ সালের দিকে রুবেলের সঙ্গে বিয়ে হয় হাসির। হাসির বাবা হাসেম একজন দরিদ্র রিকশাচালক। তিনি রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে থাকেন। সাথে তার ৩ ছেলে ও দুই মেয়েও। ছেলেরা রিকশা চালায় এখানে।

বিয়ের পর থেকেই হাসি বড়ুয়া স্বামীর বাড়িতেই থাকতেন। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ি নানারকম অত্যাচার করত। শ্বশুর-শাশুড়ির এ ধরনের নির্যাতনের কথা স্বামী রুবেলকে বললেও কোনো কর্ণপাত করত না। এভাবে চলতে থাকলে মাঝেমধ্যে বাবা-মাকে জানাতেন হাসি। বাবা-মার পরামর্শে সবকিছু সহ্য করে থাকতেন হাসি। একবার রুবেলকে এ বিষয়ে বললে উল্টো রুবেল হাসিকে মারধর করে। এরপর আর সে জানাত না। এরই মাঝে হাসির ছেলে হয়। ছেলের নাম রাখেন নীরব। দীর্ঘদিন এভাবে চলে আসার পর চলতি বছরের শুরুতে হাসিকে রুবেলসহ তার বাবা-মা মারধর করে। এ কারণে সে রাগ করে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বাবার বাড়িতে চলে আসে। এরপর তার বাবা ও ভাই মিলে হাসিকে বুঝিয়ে আবারো তার শ্বশুরবাড়িতে পাঠায়। হাসি গত এক সপ্তাহ আগে আবারো শ্বশুরবাড়িতে গেলে নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। একপর্যায়ে হাসি কাউকে কিছু না বলে আবারো বাবার বাড়িতে চলে আসে। বর্তমান সময় পর্যন্ত সে ঢাকায়ই ছিল।

জানা যায়, গত সোমবার হাসির স্বামী রুবেলও ঢাকায় আসে। রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে খুনের খেলায় মেতে ওঠে রুবেল। হাসি ও তাদের ৫ বছরের সন্তান নীরবকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পাশের খালে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

হাসির ভাই পরান জানান, বোনের সংসার টেকানোর জন্য তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। বোনের শাশুড়ি ও শ্বশুর দুজন মিলেই বোনকে মারধর করত। মাঝেমধ্যে রুবেলও মারত। আমরা বোনকে বার বার বোঝাতাম। তাদের পরিবারকেও আমরা অনেকবার বুঝিয়েছি। কিন্তু তারা আমার বোনকে বাঁচতে দিল না।

তিনি আরো বলেন, বোনকে মারল, সাথে ছোট ছেলেটাকেও মারল। কী অন্যায় ছিল আমার বোনের, কী অন্যায় ছিল ছোট ছেলেটার।

পরান বলেন, সোমবার তো রুবেল এলো বাসায়। আমরা ভাবলাম স্বামী-স্ত্রী আবার এক হয়ে গেছে। কিন্তু মনের মধ্যে এ রকম খুন করার পরিকল্পনা নিয়ে আসবে কে জানত? আমরা শুধু বলব, শুধু রুবেল খুনি না, রুবেলের পুরো পরিবার খুনি। এরাই পরিকল্পনা করে এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসির বাবা হাসেম আলী বলেন, ৩০ বছর ঢাকায় থাকি। কোনোদিন কারো সাথে কোনো গন্ডগোল হয়নি। অনেক আশা নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। কোলভরে এক সন্তানও এসেছিল। আমরা অনেক মজাই করতাম। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না।

তিনি বলেন, অনেকবার তাদের পরিবারকে বুঝিয়েছি। কিন্তু কেউ শোনেনি। আমার মেয়েকে প্রায়ই ওরা মারত। কিন্তু আমি কোনো প্রতিবাদ করতে দিতাম না। শেষ পর্যন্ত ওরা আমার মেয়েকে হত্যা করেই ছাড়ল।

রুবেলসহ তার পরিবার পরিকল্পনা করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা রুবেল ছাড়াও পরিবারের পুরো সদস্যদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করব।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত নূরে আজম বলেন, মা ও ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। ‘কড়াইল বস্তির বউবাজারসংলগ্ন লেকপাড়ে হাসি ও তার ছেলে নীরবের মরদেহ দেখে স্থানীয়রা আমাদের খবর দেন। পরে ঘটনাস্থলে বনানী থানার একটি টিম গিয়ে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।’

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহ করা হচ্ছে হাসির স্বামী রুবেলকে। পারিবারিক কলহ ছিল; এর জের ধরেই তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ওসি নূরে আজম জানান, মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads