• বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪২৯
নুসরাত-মুনিয়া : টার্গেট ব্ল্যাকমেইলিং

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

নুসরাত-মুনিয়া : টার্গেট ব্ল্যাকমেইলিং

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ মে ২০২১

মুুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে। বিশেষ করে মুনিয়ার জীবনযাপন, নুসরাতের সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক এবং মুুনিয়ার অতীত নিয়ে যে তথ্যগুলো পাচ্ছে তাতে এটি আর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা থাকছে না। মামলাটি নাটকীয়ভাবে অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে।

একাধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্র বলছে, মুনিয়ার মৃত্যুকে যেভাবে অপপ্রচার মামলা হিসেবে দায়ের করার চেষ্টা করা হয়েছিল ব্যাপারটা ততো সহজ নয়। দেখা যাচ্ছে যে, এর পেছনে এক ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং রয়েছে এবং অতীতেও এই ধরনের বিভিন্ন তৎপরতার সঙ্গে তারা দুই বোন জড়িত ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা নুসরাতকে ডেকেছেন এবং তাদের অতীত বিষয়গুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কিন্তু নুসরাত মিডিয়ার মাধ্যমে এই বিষয়গুলো নিয়ে একটি সহানুভূতি আনার চেষ্টা করছেন।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বলছেন আইন নির্মোহ, তদন্তে যা সত্য তাই বেরিয়ে আসবে। তদন্তে দেখা যাচ্ছে, যাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি, তিনি নুসরাত এবং মুনিয়ার অনেকদিনের টার্গেট ছিল। তারা চেয়েছিল যে বসুন্ধরার এমডিকে ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করা। কিন্তু মুনিয়ার যখন আকস্মিক মৃত্যু হয় তখন নুসরাত মনে করে যে, মুনিয়ার আত্মহত্যা মামলায় যদি বসুন্ধরার এমডিকে ফাঁসিয়ে দেওয়া যায় তাহলে একবারে বিত্তবান হওয়া যাবে। আর সেই টার্গেট নিয়েই এই মামলাটি করা হয়েছে। কারণ প্রাথমিকভাবে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অপমৃত্যুর এই মামলাটি দায়ের করেছেন নুসরাত।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অডিও টেপের ওপর ভিত্তি করে বাজারে গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, বসুন্ধরার এমডি আনভির ওই মেয়েটিকে হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু সেই অডিও টেপটি দেড় বছরের পুরোনো। দেড় বছরের একটি পুরোনো টেপ কীভাবে সামপ্রতিক সময়ের আত্মহত্যা প্ররোচনায় বর্তমান উপযুক্ত হতে পারে সেটি একটি বড় বিষয়। এছাড়াও যে ঘটনা সাজানো হয়েছিল যে একটি বাসায় ইফতারে যাওয়ার কারণে আনভীর তাকে বকেছিল, সেটিরও কোনো বাস্তব সত্যতা পাওয়া যায়নি। এমনকি বসুন্ধরার এমডির অতীত নিয়ে যেসব কথাবার্তা বলা হয়েছিল, যে বসুন্ধরার এমডির মা তাকে হুমকি দিয়েছে ইত্যাদি এসবেরও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো জানিয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে, নুসরাত এবং মুনিয়া অতীতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন, মুনিয়াকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা এবং সেই সখ্যতার পরে ওই ব্যবসায়ীকে ব্লাকমেইল করাই ছিল নুসরাত-মুনিয়ার প্রধান পেশা। মুনিয়া তার সৌন্দর্য দিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেন। তারপর  নুসরাত সামনে আসতেন এবং ওই ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইল করতেন। মুনিয়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে চ্যাটিং করতেন ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে, তাদের কল রেকর্ড করতেন এবং অন্যান্য অসতর্ক মুহূর্তগুলো রেকর্ড করে নুসরাতের কাছে দিতেন এবং নুসরাত পরে এটিকে ব্যবহার করতেন।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বলছেন, মুনিয়া যে একাধিক ব্যক্তির কথা রেকর্ড করেছে, এটি বাংলাদেশের টেলিগ্রাফ আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া একজন ব্যক্তি আরেকজন ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিরেকে তার কথোপকথন রেকর্ড করতে পারে না। এটি টেলিফোন-টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু মুনিয়া এবং নুসরাত এই কাজটিই করতেন ও ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই ছিল তাদের মূলব্যবসা।  কিন্তু বসুন্ধরার এমডির ক্ষেত্রে সেটি সফল না হওয়ায় নুসরাতের আক্রোশ বেড়ে যায় এবং মুনিয়ার মৃত্যুর পর এক ধাক্কায় সবকিছু অর্জনের জন্যই এই মামলাটি করেছে বলেই অনেকে মনে করছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads