• বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

সিরিয়ার ইদলিবে যুদ্ধে ছিলেন জঙ্গি সাখাওয়াত

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৪ জুন ২০২১

পড়াশুনা করেছেন লন্ডনের গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফেরেন। এরপর কথিত হিজরতের জন্য চলে যান তুরস্কে। এরপর তুরস্ক থেকে সিরিয়া। সেখানে ৪ বছর যুদ্ধ করে গত মার্চে চলে আসেন বাংলাদেশে। এরপর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সাথে যোগ দিয়ে সংগঠনটির আইটি স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) নজরদারিতে এড়াতে পারেনি সে। অবশেষে গোয়েন্দা জালে আটক হয়েছে সাখায়াত হোসেন লালু নামের সিরিয়াফেরত এ জঙ্গি।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আনসার আল ইসলামের অপারেশনাল কমান্ডার হিসেবে পরিচিত পলাতক মেজর (অব.) জিয়ার সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে।  দেশে এবং দেশের বাইরে জঙ্গি বিষয়ে প্রচারনা করতো সে। পাশাপাশি চট্রগ্রাম অঞ্চলের জঙ্গিদের একত্রিত করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছিল। সিটিটিসির সাইবার ইউনিটের নজরদারিতে ছিল সে। অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে।

যেভাবে গ্রেপ্তার : গত মার্চে সাখায়াত হোসেন দেশে আসার পর থেকে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। সিটিটিসির সাইবার ইউনিট নজরদারির মধ্যে এনে একাধিকবার অপারেশন পরিচালনা করে কিন্তু তার অবস্থান বদলের কারণে গ্রেপ্তার এড়িয়ে যান। সর্বশেষ গত শুক্রবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় আহলে হাদিস জামে মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দামপাড়া এসএইচ পেট্রোল পাম্পের উত্তর পাশের গলির শেষ মাথা এলাকার বাসিন্দা এবং শেখ মো.শমসের আলীর ছেলে।

কাউন্টার টেরোরিজমের উপ-কমিশনার হাসান মোহাম্মদ শওকত আলী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, সাখাওয়াত আলী ২০১২ সালে তার ভায়রা ভাই মো. আরিফ মামুনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া, মনসুরাবাদ এলাকার শফিক হুজুর, লালখান বাজার এলাকার এসির দোকানের কর্মচারী ওমর ফারুকদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আনসার আল ইসলাম এর সদস্যদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে ২০১৭ সালে তুরস্ক যান সাখাওয়াত। তুরস্ক হতে অবৈধপথে সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করে ৬ মাস ‘হায়াত তাহরীর আরশাম’ এর কাছে ভারী অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণ নেন এবং ইদলিব এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্ক হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করেন। এরপর ইন্দোনেশিয়া হতে শ্রীলংকা হয়ে পুনরায় ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে বসবাস করেন। ইন্দোনেশিয়ায় থাকাকালে তিনি জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ দেশে ফিরেন। 

সূত্র জানায়, আনসার আল ইসলামের আইটি বিশেষজ্ঞ সাখাওয়াত সিরিয়া থেকে চট্টগ্রামে আসার খবরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।  তার কাছ থেকে বিভিন্ন জিহাদি কাগজপত্র, ১টি পাসপোর্ট,  ১টি মোবাইল ফোন, ১টি  ট্যাব ও ১টি মিনি নোটবুক জব্দ করা হয়েছে। খুলশী থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রিমান্ডে সাখাওয়াত : শুক্রবার আটকের পর গত শনিবার তাকে আদালতে পাঠিয়ে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে রিমান্ডের প্রথম দিনেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বিগত সময়ে আনসার আল ইসলামের কয়েকটি হত্যাকাণ্ড, মেজর জিয়ার অবস্থান আগামীর পরিকল্পনা এগুলো  নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

কর্মকর্তারা বলছেন, সারাদেশে আনসার আল ইসলামের যে নেতা রয়েছে সাখাওয়াতের নিকট থেকে এর একটি তালিকাও এসেছে। এগুলো যাছাই বাছাই করা হচ্ছে।

বিগত সময়ে চট্রগ্রামে পুলিশের উপর বোমা হামলার ঘটনার বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশের সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাছিব বলেন, সাখাওয়াতকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আসছে। তদন্তের স্বার্থে এগুলো পরে জানানো হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads