• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯
কাউন্সিলর মানিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

কাউন্সিলর মানিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জুন ২০২১

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগ উত্তরের সহসভাপতি কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এক নারী বাসিন্দা। ওই নারী মেয়র আতিকুল ইসলাম ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন। পাশাপাশি প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আদালতে মামলার। অভিযুক্ত কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ঐ নারীকে উসকে দিয়ে এসব অভিযোগ করাচ্ছে।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, কাউন্সিলর মানিক ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে তাকে চার-পাঁচ মাস ধরে ‘ধর্ষণ’ করেছেন। এ ঘটনায় তিনি সোমবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগ, ২০১৪ সালে স্বামীর সঙ্গে তার কলহ হয়। ঘটনাটির বিচারের দায়িত্ব নেন কাউন্সিলর। তিনি ওই নারীকে ভুল বুঝিয়ে স্বামীকে তালাক দিতে বলেন। তবে তৎকালীন মেয়র সেই তালাকের আবেদন গ্রহণ না করে বিবাদ মিটিয়ে সংসার করার পরামর্শ দেন।

তখন কাউন্সিলর জোর করে তার স্বামীকে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন। একসময় মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তারও করান। পরে তাকে চাপ দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির ব্যবস্থা করেন মানিক। এরপর তিনি আশ্রয় দেওয়ার নামে সেই নারীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। তাকে দোতলার একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হয়। বিনিময়ে ওই বাসার সব কাজ করে দিতেন ভুক্তভোগী। একদিন স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে গিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান কাউন্সিলর।

এ সময় নারী প্রতিবাদ করলে তাকে বিয়ের আশ্বাস দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী নারী বিষয়টি মানিকের স্ত্রীকে জানান। এতে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। তখন মানিক জোর করে ভুক্তভোগী নারীকে তার বাসায় রাখেন। এ সময় তিনি অচিরেই বিয়ে করবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবে দীর্ঘদিন চলে তাদের সম্পর্ক। একসময় আবার স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হলে মানিক তাকে বাসায় ফিরিয়ে আনেন। তখন ভুক্তভোগীকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই থেকে সেই নারী অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানালে ক্ষিপ্ত হন মানিক। এর জের ধরে গত বছরের ১২ মে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে তার ওপর হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনায় একাধিকবার পল্লবী থানায় মামলা করতে গেলেও তা নেয়নি পুলিশ। পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে এই থানার দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগে কী হয়েছে বলতে পারছি না। তবে এখন কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে এলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করব। তদন্তে সত্যতা প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর মানিক বলেন, ‘একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় আমি থাকি। আর দোতলায় থাকেন বাড়িওয়ালি। তিনি আবার অভিযোগকারী নারীর বান্ধবী। এর সুবাদে সেখানে থাকতেন ওই নারী। মাঝেমধ্যে তিনি আমার বাসায় এসে খেতেন। পরিচিত হওয়ায় অনেক সময় আমার স্ত্রী তাকে বাসার চাবি দিয়ে বাইরেও যেতেন। তবে অভিযোগকারী কখনোই আমার বাসায় থাকতেন না। ধর্ষণের তো প্রশ্নই ওঠে না।’

মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এখনো কোনো অভিযোগপত্র তিনি হাতে পাননি। অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশাল ক্যাডার বাহিনী : কাউন্সিলর মানিক, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা ও ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমান উল্লাহ আমানের ছত্রছায়ায় পল্লবীতে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। প্রতিটি কিশোর গ্যাং প্রধানদের ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে ব্যবহার করেন কাউন্সিলর মানিক ওরফে বোমা মানিক। মিরপুর-১১-তে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে ইমরান তালুকদার ওরফে লাদেন সোহেল। হোসেন মনির বাবু ওরফে পিস্তল বাবু, কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আরমান, তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ও হত্যা মামলার আসামি লেংড়া রুবেল, গলাকাটা পারভেজসহ তালুকদার বাহিনীতে রয়েছে অর্ধশতাধিক কিশোর ও যুবক। মূলত মাদক ব্যবসা, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে সায়েস্তা করার কাজে তালুকদার বাহিনীকে ব্যবহার করেন মানিক।

কাউন্সিলর মানিক ও জুয়েল রানার হয়ে মিরপুর সেকশন-১০-এর কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রদল নেতা পল্টন। এ গ্যাংয়ে মাদক ব্যবসায়ী মফিজ ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজিব, মিজান, বাপ্পিসহ ২০০-এর অধিক যুবক কিশোরদের নিয়ে এক বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছে ছাত্রদল নেতা পল্টন। পল্টন বাহিনীকে ওয়াপদা বিহারি ক্যাম্পের মাদক ব্যবসা ও ফুটপাত দখল করে দোকান ভাড়া দেয়ার কাজে ব্যবহার করেন এ বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি কাজী মানিক। মাঠে মাদক বিক্রি ও বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী মফিজ ও শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রাজিব। ওয়াপদাহ কলোনীর মাদক ব্যবসায়ীদের দেখভাল করেন বিহারি নেতা আবরার ও নেয়াজ। নেয়াজ ও আবরার দুই ভাই। এক ভাই কাজ করেন কাউন্সিলর মানিকের জন্য এবং অন্য ভাই কাজ করেন জুয়েল রানার জন্য। কোনো মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হলে তাকে তাৎক্ষনিক ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব পালন করেন তথাকথিত এ দুই বিহারি নেতা। অন্যদিকে মিরপুর গোলচক্কর থেকে শুরু করে হোপ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে দোকান ভাড়া দেন পল্টন ও বাপ্পি। সেখানে দোকান করতে চাইলে ১ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসে ৯ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। এসব টাকা কালেকশন করে ছাত্রদল নেতা পল্টন ও বাপ্পি। এ টাকাও যায় কাউন্সিলর মানিকের পকেটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads