• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

অপরাধ

অবৈধ অস্ত্র নতুন রুটে ঢুকছে রাজধানীতে

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ২৬ আগস্ট ২০২১

রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ এখনো বন্ধ হয়নি। বরং অস্ত্র প্রবেশের রুট বদল করেছে চোরাকারবারিরা। অতীতে বিদেশি পিস্তলের অন্যতম রুট ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বাস বা ট্রেন হয়ে সরাসরি ঢাকা। কিন্তু র্যাব-পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে এ রুট তেমন ব্যবহার হচ্ছে না। নতুন রুট হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত থেকে অস্ত্র নিয়ে নওগাঁ-বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা হয়ে আরিচা দিয়ে ঢাকায় আসছে। নিরাপদে অস্ত্রের চালান ঢাকায় আনতে তারা এ রুট ব্যবহার করছে। স্থানীয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় ছিল অস্ত্র চোরাকারবারিরা। রাজশাহী র্যাব-৫-এর অভিযানে ৬টি অস্ত্র উদ্ধারের পর এই রুটের সন্ধান মেলে। এ সময় দুই চোরাকারবারিকে আটক করতেও সক্ষম হয়েছে তারা। এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ দুটি বিদেশি পিস্তলসহ আরো দুই ব্যবসায়ীকে আটক করে।

র্যাব সূত্র জানায়, গত ২৩ আগস্ট নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দুই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আটক দুজন হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তপুর উপজেলার শেখপাড়া এলাকার কিবরিয়া রাজুর ছেলে মো. হূদয় (২৭) ও হামিদপাড়া এলাকার আফাজের ছেলে মো. শিশির (২০)। রাজশাহী র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান তালুকদার জানান, র্যাব-৫-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নওগাঁ জেলার ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় একটি রিভলভার, পাঁচটি ওয়ান শুটারগান, এক রাউন্ড গুলি ও নগদ টাকাসহ ওই দুজনকে আটক করা হয়। তিনি জানান, আগ্নেয়াস্ত্রগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে কিনে নওগাঁ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। পরে অস্ত্রগুলো বগুড়া হয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বলে স্বীকার করেছেন  আটকরা।

তিনি জানান, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্রের একটি বড় অংশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হতে সংগ্রহ করে চোরাকারবারীরা। আগে নানা কৌশলে তারা এগুলো বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করত। এসব এলাকায় সাঁড়াশি অভিযানে ধরা পড়া এমনকি কঠোর নজরদারীর ফলে তারা চাঁপাই-রাজশাহী রুট পরিবর্তন করে। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এখন রহনপুর হয়ে নওগাঁ নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে বগুড়া হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায়।

র্যাব ৫-এর অধিনায়ক বলেন, বর্তমানে এ রুটেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আর নজরদারীর কারণে আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। র্যাব-৫-এর আওতাভুক্ত চাঁপাইনবাগঞ্জ ও নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় অস্ত্র ব্যবসায়ীদেরও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গত ১৭ আগস্ট ২ বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন চোরাকারবারিকে আটক করে। আটকদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ।  গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-মো. জানিবুল ইসলাম জোসি ও মো. বাসির আলী। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত হতে ২ টি পিস্তল, ৮ রাউন্ড পিস্তলের গুলি এবং ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, অবৈধ অস্ত্রের বিপণন, ব্যবহার ও প্রদর্শন সবকিছুই প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। কিছু বর্ডার এলাকা থেকে ঢাকা শহরে মাঝেমধ্যে অবৈধ অস্ত্র এসে থাকে, তারই ধারাবাহিকতায় গুলি, ম্যাগাজিনসহ দুটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় জোসি ও বাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্ধারকৃত অবৈধ অস্ত্রসমূহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানা এলাকা হতে ঢাকায় নিয়ে আসে। অবৈধ অস্ত্রগুলো বিক্রয় করার জন্য তারা যাত্রাবাড়ী থানার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান করছিল।

গ্রেপ্তারকৃত জোসি ইতোমধ্যে দুবার অস্ত্র মামলায় ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা ঢাকা শহরে কোনো অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি বা কাউকে অস্ত্র সরবরাহ করার জন্য এনেছিল কি না কিংবা এ ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত কি না এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে বলে জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বর্ডার এলাকায় কিছু অসাধু অস্ত্র ব্যবসায়ী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এগুলো ঘটছে কি না আমরা খতিয়ে দেখছি। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত কঠোর অবস্থানে থাকে। অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক জেসি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার অন্যতম শীর্ষ অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। এর আগেও র্যাব ও পুলিশের হাতে দুবার অস্ত্রসহ আটক হয়। ওই মামলাগুলোতে জামিনে বেরিয়ে আসার পরও সে অস্ত্র কারবারির সাথে যুক্ত। সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র নিয়ে রাজশাহী রুটে না এসে নওগাঁ বগুড়া হয়ে সে ঢাকায় আসে। এর আগেও কয়েকবার সে নিয়ে এসেছে বলে পুলিশের নিকট স্বীকার করে।

এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, লকডাউনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ব্যাপক চোরাচালান সংঘটিত হয়েছে। এসবের মধ্যে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যাই বেশি। বর্তমানে লকডাউন না থাকার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির কারণে কিছুটা কমেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে অবৈধ অস্ত্রকারবারিদের তৎপরতা চলছে।

এলাকাবাসী আরো জানান, ঢাকা ও চট্রগ্রাম থেকে অস্ত্র কিনতে এই এলাকায় আসে। কখনও তারা নিয়ে যায় আবার কখনো এটি পৌঁছে দিতে হয়। আর পৌঁছানোর জন্যই এ রুট পরিবর্তন করেছে। রাজশাহী র্যাব ৫-এর অভিযানে গত জুলাই থেকে চলতি আগস্ট পর্যন্ত ১২ টি বিদেশি পিস্তল, বেশি কিছু ওয়ানশুটার গান ও অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আটক করেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads