• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জৈষ্ঠ ১৪২৯
বালু সরবরাহের কাজ দেওয়ার নামে প্রতারণা!

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্প ঘিরে দুষ্টচক্র

বালু সরবরাহের কাজ দেওয়ার নামে প্রতারণা!

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বালু সরবরাহের কাজ দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারকচক্র। মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপানের ওবায়েশির কার্যাদেশ জাল করে দুটি প্রতিষ্ঠান এ প্রতারণা করছে। এর একটি হলো রাজধানীর ৭৯/১, কারাইলের আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল এবং অপরটি মতিঝিলের ২৮/এ-৩, টয়েনবি সার্কুলার রোডের নেক্সট করপোরেশন। এ নিয়ে ওবায়েশি করপোরেশন থানায় সাধারণ ডায়েরি এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণের কাজ করছে যৌথভাবে জাপানের ওবায়েশী, তোয়া ও জেএফই করপোরেশন। বহুজাতিক এই কনসোটিয়াম কোম্পানির কাছ থেকে নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহের আদেশ পেয়েছে বলে দাবি আল-তাকদির ইন্টারন্যাশনাল ও নেক্সট করপোরেশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের। বালু ও পাথর নেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ওবায়েশি। প্রতারণার বিষয়ে ওবায়েশির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছে গুলশান থানায়। পাশাপাশি গণমাধ্যমেও দেওয়া হয়েছে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি। আল তাকদীর ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করে ব্যবসায়িদের কাছে দাবি করছে, ৯০ টাকা দরে ৯০ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছে তারা। এতে মূল্য আসে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, পুরো প্রকল্পে বালুর দরকার হবে ২৫ থেকে ৩০ লাখ ঘনফুট। যার মূল্য আসে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। এমন প্রতারণা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিন তিনি। 

জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্র্যান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে চায়। তাই যমুনার ওপর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছরের ২৯ নভেম্বর সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্থমানে দেশে তিন হাজারের বেশি রেলসেতু রয়েছে। যেগুলো সবই ছোট। এখনো পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু হলো পাবনার পাকশীতে পদ্মা সেতুর ওপরে একশ বছরের পুরনো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। কিন্তু যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটি নির্মাণ হলে সেটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এর বেশিরভাগ অর্থ আসছে জাপানি ঋণে। সামপ্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন, কারিগরি সহায়তা, স্থাপনাগুলোর কাঠামো ও নানা যন্ত্রাংশ দিচ্ছে যে দেশগুলো, জাপান তার মধ্যে একটি।

প্রকল্প সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ওপরে যে বঙ্গবন্ধু সেতু রয়েছে, সেই সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে এটি নির্মিত হচ্ছে, যার দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে যে রেললাইন রয়েছে তার ওপর দিয়ে বর্তমানে ৩৮ টি ট্রেন চলাচল করে। রেল সেতুটি নির্মাণ হয়ে গেলে ৮৮ টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সেসময় নতুন রুট চালু করা হবে। বর্তমানে যে রেল সেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। এই সেতুটিতে দুটি রেল লাইন বসবে। যার ফলে কোনো ট্রেনকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসঙ্গে দুটো ট্রেন দুদিকে চলে যেতে পারবে। এছাড়া এটির ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে একাধিক লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে। সাধারণত মালবাহী ট্রেনগুলোকে প্রায়ই দুটি ইঞ্জিন দিয়ে টানতে হয়। বর্তমান ব্রিজের ওপর দিয়ে সেটি সম্ভব হয় না। ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য সেটিকে অন্য আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু সেতুতে নেই। যে কারণে পার্বতীপুরের কারখানায় মেরামতের জন্য ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এই সেতুতে সেটি সম্ভব হবে।

প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার কামরুল আহসান জানান, এই সেতুটি তৈরিতে যেসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেটি এখনকার রেল সেতুগুলো থেকে আলাদা। এটি ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে তৈরি হবে। আমাদের এখনকার যে সেতুগুলো রয়েছে সেগুলো দুই তিন বছর পরপর রঙ করতে হয়। এটা আমাদের কখনোই রঙ করতে হবে না। এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় শূন্য। এই সেতুটির ফাউন্ডেশনে জাপানের একটি প্রযুক্তি ব্যাবহার হবে। যে প্রযুক্তি জাপানের বাইরে খুব কম ব্যবহূত হয়। রেল লাইনগুলো চাকার ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়া কমাতে বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হবে। তাই লাইনগুলো কম পরিবর্তন হবে। বছর তিরিশও চলে যেতে পারে। ব্রিজের সংযোগস্থলে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তাতে ব্রিজটির নিজের ওজন কম হবে।

২০১৬ সালে প্রকল্পটি পাশ হয়েছিল। কিন্তু তার কাজ শুরু হতে চার বছরের মতো সময় লেগেছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এর কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রাথমিকভাবে যে খরচ ধরা হয়েছিল সেটিও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ব্রিজটির জন্য ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাচ্ছে বাংলাদেশ। বাকি অর্থ বাংলাদেশ দেবে। ব্রিজটি নির্মাণে জাইকার সাথে দুটি ঋণ চুক্তি হয়েছে। যার একটি ১ শতাংশ সুদে আর অন্যটি ০ দশমকি ৬ শতাংশ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads