• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯
অর্থ সহায়তা চাইতে ওঠা শিশু মরিয়মকে বাস থেকে ফেলে হত্যা

সংগৃহীত ছবি

অপরাধ

অর্থ সহায়তা চাইতে ওঠা শিশু মরিয়মকে বাস থেকে ফেলে হত্যা

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০২১

রাজধানীতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে সাহায্য চাইতে উঠেছিল ১০ বছরের মরিয়ম। কিছুদূর যাওয়ার পর ‘এটা গেটলক’ বলে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া তাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

গত ৯ নভেম্বর সকালে রাজধানীতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তারা হলেন রাইদা পরিবহনের চালক রাজু মিয়া (২৫) ও তার সহযোগী ইমরান হোসেন (৩৩)।

শুক্রবার দিবাগত রাতে আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শনিবার দুপুরের কার‌ওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, আটকের পর চালক রাজু মিয়া ও হেলপার ইমরান হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর  চালক রাজু মিয়া ও তার সহকারী ইমরান হোসেন প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের  বাস (ঢাকা মেট্রো ব- ১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকালে যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় চালক দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বাসটি প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছলে মরিয়ম বাস যাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে গাড়িতে উঠে। ইমরান হোসেন এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিলেন। হেলপার ইমরান তখন লক্ষ্য করেন, একজন ছিন্নমূল পথশিশু গাড়িতে উঠে অর্থ সাহায্য চাচ্ছে। তাই তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চালককে গাড়ির গতি কমাতে বলেন। মরিয়ম ওই সময় দরজার কাছে যায় নামার জন‌্য। এ সময় বাসের চালক গাড়ির গতি হালকা কমিয়ে শিশুটিকে নামতে বলে।  মরিয়ম তাড়াহুড়া করে নামার সময় হঠাৎ করে চালক গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। এতে মরিয়ম বাসের দরজা থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে। এ দৃশ্য দেখে গাড়িতে উপস্থিত যাত্রী ও পথচারীরা গাড়ি থামাতে বললেও চালক দ্রতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যান।’

তিনি জানান, পরবর্তীতে গ্রেপ্তার আসামিরা দিয়াবাড়ি থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ফিরতি ট্রিপ নিয়ে আসার সময় জানতে পারেন রাস্তায় পড়ে যাওয়া শিশুটি মারা গেছে। পরে তারা পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে আত্মগোপনে চলে যান। 

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, রাজু মিয়া প্রায় ৬ বছর ধরে রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালায়। ইমরান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ছয় মাস ধরে তিনি রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ করছেন।

উল্লেখ‌্য, গত ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি শিশুটি অচেতন অবস্থায় যমুনা ফিউচার পার্কের উল্টো পাশের ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে শিশুটিকে নিয়ে এক নারী ও পুলিশের একজন সদস্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে শিশুটির বাবা লাশ শনাক্ত করেন। তবে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশুটির নাক দিয়ে রক্ত পড়া এবং যৌনাঙ্গ ফুলে থাকার কথা বলা হয়।

র‌্যাব জানায়, ওই শিশুর মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনে তার পরিবার, প্রতিবেশী এবং ঘটনাস্থলে অবস্থানরত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শিশু মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেত থানার কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করত। তার বাবা একজন প্রাইভেটকার চালক। ২০১৯ সালে শিশুটি স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ ছিলো। সে নিয়মিত অর্থ সহায়তা পেতে কুড়িল এবং এর আশপাশের এলাকায় যাতায়াত করতো। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads